Notun Kotha

আমরা যেন আরব বিশ্বের ভুল রাজনীতিতে জড়িয়ে না পড়ি-ফজলে হোসেন বাদশা

সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি সই করতে চলেছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি রিয়াদে তা হওয়ার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের খবরে এসেছে, এই চুক্তির আওতায় ইয়েমেন সীমান্তে ১৮০০ বাংলাদেশি সেনা নিয়োগ করা হবে। সৌদি আরবের ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টারটেরোরিজম কোয়ালিশন (আইএমসিটিসি)-এ বাংলাদেশ থেকে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সহ চারজন কর্মকর্তাকে নিয়োগের জন্য নামও দেয়া হয়েছে বলে খবরে এসেছে। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে এই খবর নিয়ে আলোচনা চলছে। বলাবাহুল্য, দেশের ভেতরে যেমন খবরটি আলোচনা সৃষ্টি করেছে, দেশের বাইরেও এই খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হবে। কেননা, মধ্যপ্রাচ্যের বিরোধপূর্ণ ভূরাজনীতিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সরাসরি অংশগ্রহণ প্রকাশ্যে এলো এই প্রথম।

২০১৫ সালে যখন সৌদি নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগে বাংলাদেশ নাম লিখিয়েছিলো, আমি বলেছিলাম, বিষয়টি আমাদের জন্য কতোটা ইতিবাচক হবে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা জরুরি। খটকা ছিলো তখনই। কারণ সৌদি যেটাকে ৩৪ দেশের সামরিক জোট বলছিলো, আমরা তখন সেটিকে সন্ত্রাসবিরোধী সমন্বিত উদ্যোগ বলেছি। ভাষার দিক দিয়ে ব্যাপারটা যাই হোক, এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিরোধপূর্ণ রাজনীতিতে যে বাংলাদেশ একটি পক্ষ নিয়ে নিয়েছে, তা নিশ্চিত। এরপর এবারের এই প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে তুলবে নিঃসন্দেহে।

বাংলাদেশের সংবিধানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। দুই দিক দিয়ে বিদেশনীতি পর্যালোচনার দাবী রাখে, প্রথমত দেশের বাহিরে সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের সাথে সংগতিপূর্ণ কিনা; দ্বিতীয়ত আমাদের সামরিক বাহিনীর বিদেশে উপস্থিতিতে রাজনৈতিক ভাবমূর্তি বাংলাদেশের কি হচ্ছে। যুদ্ধের উদ্যেশ্যে বা অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের নীতি আমাদের নেই। সংবিধানে সা¤্রাজ্যবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধেও সুস্পষ্ট অবস্থান আছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে বিবাদমান পরিস্থিতিতে একটি পক্ষের দিকে ঝুঁকে পড়া আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য ও আঞ্চলিক বৈদেশিক নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বাংলাদেশ আরব বিশ্বের দেশ নয়। আরবের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিল না। বাংলাদেশ এর আগে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়াদি নিয়ে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। সরাসরি সামরিক জোটে যোগ দেয় নি। ফলে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিদেশনীতি সব সময়ই বাংলাদেশের জন্য বজায় রাখা সহজ ছিলো। কিন্তু সৌদি আরবের সঙ্গে অতিঘনিষ্ঠতা তার সেই ভাবমূর্তিকে নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে অস্থিতিশীল ও দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে বয়ে এনেছেন দেশের জন্য সুনাম। সেই ভূমিকার সঙ্গে এই ভূমিকাকে এক করা যাবে কি না তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। এখানে বলে রাখা ভালো, ইরাকি শাসক সাদ্দাম হোসেন কুয়েত দখল করে নিলে পরবর্তীকালে সেটি দখলমুক্ত করার জন্য ১৯৯১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সৌদি আরব থেকে ইরাকে যে অভিযান চালায়, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কুয়েত কে মাইনমুক্ত করতে সহায়তা করে। তবে সেই সময় আন্তর্জাতিকভাবে এই অভিযানটি ভিন্নভাবে স্বীকৃত ছিলো। কিন্তু বিরোধপূর্ণ ইয়েমেন সীমান্তে এবার বাংলাদেশের সেনা মোতায়েনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। যদিও বলা হচ্ছে, সীমান্তে আমাদের সেনারা মাইন অপসারণের কাজ করবে। তারপরেও ইয়েমেনে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক তৎপরতাকে বিবেচনায় নিলে এই সংযুক্তিকে কোনোভাবেই যুদ্ধ অবস্থায় অংশগ্রহণের বাইরে অন্যকিছু হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ইয়েমেনকে কেন্দ্র করে বিশ্বরাজনীতির যে মেরুকরণ, সেখানে বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট পক্ষাবলম্বন ভবিষ্যতে আমাদের অনেক বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভালোভাবে নাও নিতে পারে।

ইয়েমেনে আলকায়েদার শক্তিশালী অবস্থানকে যেভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে, সেই বাস্তবতাকে মাথায় রাখা জরুরি। আরব বসন্তের আরেক সর্বনাশা পরিণতি ইয়েমেন। দারিদ্র্যপীড়িত এই দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে ক্ষমতার পালাবদল ও গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নয়, বরং সৌদি নেতৃত্বে ৮ সুন্নী দেশ ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা সেখানকার সঙ্কট ঘণীভূত করতে অভিযানের পর অভিযান চালিয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলাফল যা হয়েছে, তা হলো, জাতিসংঘের ভাষায় এটিই বিশ্বের সবচেয়ে মানবসৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় হিসেব চিত্রিত হয়েছে। আর ওদিকে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির এই সুযোগকে পুরোদমে কাজে লাগিয়ে আল কায়দা ইন দি আরব পেনিনসুলা আর ইসলামিক স্টেট গ্রুপ ভালোভাবে শক্তি সঞ্চয় করেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর দাবি। এই বাস্তবতায় আমরা সৌদির সঙ্গে সমঝোতার আওতায় সেনা পাঠালে, তারা যে কাজই করুক না কেন, আমাদেরকে আগামীতে সৌদি আরবের পক্ষের সামরিক শক্তি হিসেবেই ধরা হবে। এখানে সৌদি আরবের যে বড় কৌশল, তা হলো, ইয়েমেন সঙ্কট নিরসনে জাতিসংঘের তিনটি সংস্থা বারবার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সেখানে শান্তিরক্ষীদের অন্তর্ভূক্তি করা যায় নি। এখন সৌদি নেতৃত্বাধীন ইয়েমেনে অভিযান পরিচালনাকারী শক্তিগুলো সীমান্তে মাইন অপসারণের মতো কাজগুলো নিজেদের আওতায় করিয়ে শান্তি প্রক্রিয়ার কাজ চালানো হচ্ছে বলে বিশ্বকে দেখাতে পারে। এমন একটি কৌশলগত খেলায় আমাদের সংযুক্তি আগামীতে নিজেদের জন্যই ইতিবাচক নাও হতে পারে।

সাম্প্রতিককালের কাতার সঙ্কট আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। কাতারের ওপর অবরোধ আরোপের ক্ষেত্রে সৌদি ও তার মিত্ররা যে আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছে, তা মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের ভবিষ্যত ভাবমূর্তিকে স্পষ্ট করে। কাতার নিজেদের উদ্যোগে সঙ্কট উৎড়েছে ঠিকই। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরবদের আঞ্চলিক জোট জিসিসি দুর্বল হয়ে গেছে। স্পষ্টত বিভক্তি দেখা দিয়েছে। সে কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমনকি বড় বড় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোও কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের মতো দেশের সঙ্গে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক তৎপরতার দিকে খেয়াল করলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। মজার ব্যাপার হলো, বিশ্বরাজনীতিতে রাশিয়া ও চীন- দু’দেশের পরিচিতিই সৌদি স্বার্থের বিরোধীপক্ষ হিসেবে। মধ্যপ্রাচ্যের জটিল সমীকরণের কারণে সেই তারাও দৃশ্যত কোনো পক্ষের সঙ্গে পুরোমাত্রায় তিক্ততা রাখতে চায় না। অথচ সেখানে আমাদের আচরণ ঠিক উল্টো। বিশ্বে এমনিতেই সৌদির সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক আছে বলে ধরা হয়। এখন আমরা তাদের সঙ্গেই সামরিক সমঝোতা করছি এবং একটি যুদ্ধফ্রন্টের অংশ হচ্ছি। স্বভাবতই সৌদিবিরোধী শক্তিগুলো আমাদের ব্যাপারে আরো নেতিবাচক হয়ে উঠতে পারে।

বিশ্বরাজনীতিতে সৌদি আরব সব সময়ই পশ্চিমাদের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের আড়ালে সা¤্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের যতো রকমের প্রচেষ্টা, সবগুলোতে সৌদিদের ভূমিকা টের পাওয়া যায়। তাদের নতুন বাদশাহী নিয়ে কিছুদিন নানারকম উচ্ছ্বাস থাকলেও সাংবাদিক জামাল খাসোগী হত্যার ঘটনা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, সৌদি আরব তাদের কৌশলগত অবস্থান থেকে এতোটুকু নড়ে নি।
সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের এই সমঝোতা চুক্তি হয়তো চটজলদি আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা কি খুব বেশি লাভ বয়ে আনবে? বিশেষ করে যেখানে সৌদি মধ্যপ্রাচ্যে আরো আগ্রাসী হওয়ার জন্য তাদের সামরিক বাজেট ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে, সেখানে বলাই যায়, আগামীতে বড় ধরনের সামরিক তৎপরতার ভাবনা তাদের মাথায় রয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা এসআইপিআরআই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সৌদি আরব এখন বিশ্বে সামরিক বাজেটের দিক দিয়ে তৃতীয়। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রিয়াদের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধবিগ্রহ। সৌদি আরব গত ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়েছে। অন্যদিকে সিরিয়ায় তৎপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্রের অন্যতম যোগানদাতা হিসেবে সৌদি আরবের নাম এসেছে। এর আগে রিয়াদ ইরাকের সন্ত্রাসীদেরকেও অস্ত্র যোগাত ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিরক্ষা প্রশ্নে সৌদি নেতিবাচক ভূমিকার কারণেই আরবের দেশসমূহের বর্তমান সঙ্কট।
সৌদি আরবের সঙ্গে বিরোধে থাকা ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, সামরিক খাতে সৌদি আরবের ব্যাপক অর্থ বরাদ্দের প্রধান কারণ হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা। সৌদি আরব ২০১১ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে যুদ্ধ বাধিয়ে এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে এবং বে আইনি প্রক্রিয়ায় সেসব দেশের সরকার বদলের চেষ্টা চালাচ্ছে। সৌদি আরব মূলত গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে সামরিকিকরণের মাধ্যমে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। দেশটি আগের বছরের তুলনায় সামরিক খাতে ৯ দশমিক ২ শতাংশ বেশি ব্যয় করেছে। অথচ তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির সূচক নিম্নগামী। কদিন আগেই কাতারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হামাদ বিন জাসিম বিন জাবোর আলে সানি বলেছেন, তার দেশের ওপর সৌদি অবরোধ মারাত্মকভাবে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে মারাত্মক অনাস্থা তৈরি করেছে। রাশিয়া আল-ইয়াউমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সৌদি আরবের একতরফা সিদ্ধান্ত ও পররাষ্ট্রনীতির কারণে এক সময়কার আঞ্চলিক শক্তিশালী জোট জিসিসি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় পারস্পরিক আস্থা ফিরিয়ে আনতে বহু বছর সময় লাগবে “ এই সাক্ষাৎকারে তিনি সৌদি আরবের বর্তমান শাসকদের লক্ষ্য আরো বড় যুদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন।

বোঝাই যাচ্ছে, সৌদি আরবের সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতা নিয়ে তাদের বিরোধীপক্ষও বেশ সচেতন। বিশেষ করে, সৌদির যে আগামীতে কোনো বড় সামরিক পরিকল্পনা রয়েছে, সে ব্যাপারে তারা অনেকটাই একমত। তারা প্রকাশ্যেই অভিযোগ তুলছে, সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে যেসব দেশ রয়েছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে আইএস (ইসলামিক স্টেট) লালনের অভিযোগ আছে। তারা শিয়া-সুন্নি বিভাজনে ভূমিকা রেখেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা স্পষ্ট ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিন বিরোধী ভূমিকায় সৌদি আরবকে নিরব থাকতে দেখা গেছে। সৌদি-ইসরাইল যোগাযোগ এখন স্বাভাবিক কূটনীতিতে পরিণত হয়েছে। এরকম একটি জটিল সময়ে সৌদি আরবের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে আমরা সামরিকভাবে জড়িয়ে পড়তে চলেছি। কে জানে, এই সিদ্ধান্ত আরব বিশ্বের ভুল রাজনীতির সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যতকে যুক্ত করে ফেলছে কি না। তাই খুব জরুরি, আবারও এমন স্পর্শকাতর উদ্যোগের লাভালাভ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
#লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও সংসদ সদস্য, রাজশাহী-২

বর্ষ ৩৯, সংখ্যা ৪৫,  সাপ্তাহিক নতুন কথায় প্রকাশিত।

 

ভেনিজুয়েলার সংকট কি ও কেন?-ড. সুশান্ত দাস

 

 

 

 

১৯৭৩ সালে চিলির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আলেন্দে সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক ক্যু দে তা ও তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে রক্তাক্ত ঘটনার জন্ম হয়েছিল, তাতে বিশ্বের সকল মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছিল লাতিন আমেরিকার দিকে। এরপরও অনেক ঘটনা ঘটেছে লাতিন আমেরিকায়। কিন্তু, সম্প্রতি ভেনিজুয়েলায় উদ্ভুত রাজনৈতিক সংকট নতুন করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি লাতিন আমেরিকার দিকে নিবদ্ধ করেছে। প্রকৃত অর্থে, ভেনিজুয়েলার সংকট নিয়ে গোটা বিশ্ব আজ মোটা দাগে দু’ভাগে বিভক্ত। এত দ্রুততার সংগে বৈশ্বিক এই মেরুকরণও অত্যন্ত অর্থবহ। গত ১০ জানুয়ারি, ২০১৯ ভেনিজুয়েলার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, দ্বিতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। প্রায় সংগে সংগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার কিছু মিত্রদেশ ’নির্বাচন সুষ্ঠ’ হয় নি এই অজুহাতে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর ক্ষমতা গ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং দৃশ্যত: ভেনিজুয়েলায় রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়। ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ভেনিজুয়েলার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা হুয়ান গুয়াইদো ভেনিজুয়েলার সংবিধানের ২৩৩ ও ৩৩৩ ধারা মোতাবেক অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে, এই ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং লাতিন আমেরিকার লিমা গ্রুপের ১৪ দেশের মধ্যে ১১ টি দেশের দক্ষিণপন্থী ও রক্ষণশীল সরকার হুয়ান গুয়াইদো সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের অধিকাংশ সদস্য দেশ গুয়াইদোকে সমর্থন দেয় এবং পরবর্তী ৮ দিনের মধ্যে স্বীকৃতিও দেয়। শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানী পিডিভিএস এর উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যুক্তরাজ্যের ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে রাখা ভেনিজুয়েলার ১ বিলিয়ন পাউন্ডের সোনা, ঐ ব্যাংক বেআইনীভাবে ’ফ্রিজ’ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর লক্ষ্য যে ভেনিজুয়েলার নির্বাচিত মাদুরো সরকারকে উৎখাত করা, এটা স্পষ্টত:ই বোঝা যায়। তারা পূর্বকল্পিতভাবেই নেমেছে। ভেনিজুয়েলা সংকটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পদক্ষেপ সম্পর্কে ওয়াশিংটনের Centre for Economic and Policz Research এর একজন গবেষক মার্কস ওয়েসব্রট লিখেছেন, “This was a planned thing. It was a coordinated effort with the US and its coalition of the willing among Latin American Countries. Thez used date of Madur’s inauguration to claim that his presidencz was illegitimate.” এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার মিত্রদের দ্বারা সৃষ্ট ভেনিজুয়েলার এই সংকটে মাদুরোর পাশে দাঁড়িয়েছে নির্বাচিত মাদুরো সরকারের দীর্ঘদিনের বন্ধুদেশ রাশিয়া, চীন, কিউবা, বলিভিয়া, নিকারাগুয়া, মেক্সিকো, বেলারুশ, ইরান, সিরিয়া, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা। অনেক দেশ এখনও প্রকাশ্য অবস্থান নেয় নি। আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে, বিরোধীদের শত উস্কানি সত্বেও ভেনিজুয়েলার শ্রমজীবি ও গরীব মানুষ, ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মাদুরোর সমর্থন দিচ্ছে ও পাশে রয়েছে।

তথাকথিত মুক্ত দুনিয়ার দেশগুলো একযোগে ক্ষেপে উঠার কারণ কি? এর উত্তর খুঁজতে গেলে ভেনিজুয়েলার প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে একটু খুঁটিয়ে দেখতে হবে। ভেনিজুয়েলা লাতিন আমেরিকার উত্তর প্রান্তে আটলান্টিকের প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ। আয়তন ৩,৫৩,৮৪১ বর্গমাইল। জনসংখ্যা প্রায় ৩,১৫,৬৮,১৭৯ জন। এর ৫১.৬% মেজটিজো বা মিশ্র জনগোষ্ঠি, ৪৩.৬% ইউরোপীয়ান শ্বেতাঙ্গ, ৩.৬% আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ, ১.২% অন্যান্য। ৭১% ক্যাথলিক, ১৭% প্রটেষ্টান্ট, বাকিরা অন্য ধর্মালম্বী। দেশে ২৬ টি ভাষা রয়েছে। প্রায় ৯৭% শিক্ষিত। ২০১৮ সালে ভেনিজুয়েলার জিডিপি ৩২০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু আয় ১১,০৬৬ ডলার। দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশটিতে আছে সোনা, নিকেল, লোহা, ইস্পাত, হীরা, এ্যালুমিনিয়াম, কয়লা, এ্যাসফল্ট, প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল। তেলের মজুত পৃথিবীর বৃহত্তম -২৯৭ বিলিয়ন ব্যারেল। কয়লা ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন টন, লাতিন আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম। সোনা মজুত ১০,০০০ টন, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম। লোহা ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন টন। প্রাকৃতিক গ্যাস ৫ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার যা পশ্চিম গোলার্ধের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এছাড়া রয়েছে বিশাল বিস্তৃত বনভূমি যা সমগ্র দেশের অর্ধেক, ব্রাজিলের পরই যার স্থান। প্রাসঙ্গিকভাবে প্রশ্ন আসে, এই প্রাকৃতিক সম্পদের সঙ্গে বৈদেশিক শক্তির সম্পর্ক কোথায়? দেশটির রাজনীতি-অর্থনীতির ইতিহাসের মধ্যেই তা নিহিত। এমন প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশটির রাজনীতির ইতিহাসও বিচিত্র। ভেনিজুয়েলা ১৫২২ সাল থেকে ছিল স্পেনের উপনিবেশ। ১৮১০ সালে জেনারেল সাইমন বলিভারের নেতৃত্বে ভেনিজুয়েলা স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং দীর্ঘ উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে ১৮৩০ সালে পরিপূর্ণভাবে স্বাধীন হয়। উনবিংশ শতাব্দি ও বিংশ শতাব্দির ৫০ এর দশক পর্যন্ত গোটা লাতিন আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের নানা শোষণের প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভেনিজুয়েলার রাজনীতি ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। গোটা সময়টাতেই এদেশ স্থানীয় সামরিক নেতৃত্ব দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়। ১৯৫৮ সালে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে। এ সময়টাতে অর্থনীতিতে দেশ অনেক এগিয়ে যায়। এই সময় ভেনিজুয়েলার জিডিপি, জার্মানীর জিডিপি কে ছাড়িয়ে যায়। এর পরই শুরু হয় বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদের নয়া ঔপনিবেশিক নীতি যা ভেনিজুয়েলার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। যার ফলে, লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের মত ভেনিজুয়েলাতেও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকে। ’৮০ দশকের গোটা সময়টায় দেশের মধ্যে আই এম এফ, বিশ্বব্যাংক ও সাম্রাজ্যবাদের নয়া উদারনীতিক অর্থনীতির কৌশলের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে ব্যাপক গণবিক্ষোভ। এই সময়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে দু’টি মন্তব্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মন্তব্য দু’টি হলো, `IMF is a neutron bomb that killed people but left buildings standing’s Avi’ `Policz of World Bank is genocide of workers in the paz of economic totalitarianism’ রাজনৈতিক এই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে ১৯৮৯ সালের কারাকাস দাঙ্গা, ১৯৯২ সালের ব্যর্থ অভ্যূত্থান, ১৯৯৩ সালে প্রেসিডেন্ট কার্লোস অ্যাড্রিস পেরেজ এর অভিশংসন এবং ১৯৯৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ’৯২ এর অভ্যূত্থানের নেতা হুগো শ্যাভেজের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ভেনিজুয়লার রাজনীতিতে শুরু হয় নতুন পর্যায়। ১৯৯৯ সালে নতুন ’জাতীয় নির্বাচক পরিষদ’ বা ‘National Constituent Assemblz’ গঠিত হবার মধ্য দিয় ’বিপ্লব’ শুরু হয়। ভেনিজুয়েলার নতুন নাম হয় ‘Bolivarian Republic of Venezuela’। হুগো শ্যাভেজ শুরু করেন তাঁর ’জনবান্ধব সামাজিক কল্যাণ’ কর্মসূচী। তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনীতিক সংস্কারে হাত দেন। তিনি তেল, সোনাসহ খনিজ সম্পদ উৎপাদন ও রফতানির উপর বৈদেশিক নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করেন ও রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। ওপেক এর উপর প্রভাব বিস্তার, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক এর নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব খনিজ সম্পদের উপর নির্ভর করে জাতীয় অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিকভাবে চীন, কিউবা, রাশিয়াসহ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বলয় গড়ে তোলার প্রয়াস চালান ও সফলও হন। সাম্রাজ্যবাদের নয়া উদারনীতিবাদিক অর্থনীতির বিরুদ্ধে ’একবিংশ শতাব্দির সমাজতন্ত্রে’র শ্লোগান তোলেন। একবিংশ শতাব্দির ১ম দশকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লাতিন আমেরিকার প্রায় প্রতিটি দেশে বামপন্থী সরকার নির্বাচিত হয় অথবা বামপন্থীদের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। ভেনিজুয়েলার তেল উৎপাদনের উপর ছিল মার্কিন তেল কোম্পানীগুলোর আধিপত্য, সোনার খনির উপর ছিল কানাডা কোম্পানীগুলোর এবং কয়লাখনিতে ছিল অষ্ট্রেলিয়ার বহুজাতিক কোম্পানীগুলো। অর্থাৎ হুগো শ্যাভেজের সকল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পদক্ষেপ আসলে একযোগে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের সকল বহুজাতিক অংশীদারদের স্বার্থে আঘাত করেছে, এতে কোন সন্দেহ নাই।
ভেনিজুয়েলার সংকট সৃষ্টি আসলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বরণনৈতিক কৌশলের অংশ। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে মার্কিন সাম্যাজ্যবাদ তার বিশ্ব রণনীতি নতুন করে ঢেলে সাজায়। তাদের আফ্রো-মধ্যপ্রাচ্য নীতির শিকার হয়েছে ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়াসহ গোটা এলাকা। তার রক্তাক্ত ইতিহাস এখানে উল্লেখের প্রয়োজন নাই। ’৮০ দশক থেকে চীনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার প্রশান্ত মহাসাগরীয় রণনীতি পূনর্বিন্যাস করে। চীনকে ঘিরে তার সামরিক, বেসামরিক, অর্থনৈতিক সকল কর্মকৌশল তৈরি হয়। উত্তর কোরিয়াকে কেন্দ্র করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এশীয়-প্রশান্ত অঞ্চলকে এক যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল তাও সবার জানা। একবিংশ শতাব্দির ১ম দশকে লাতিন আমেরিকা জুড়ে ’পিংক বিপ্লব’ এ এলাকার সাম্রাজ্যবাদের বৈশ্বিক স্বার্থকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাজার চেষ্টা করেও কিউবার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে পারে নি। ভেনিজুয়েলায় হুগো শ্যাভেজের ক্ষমতায় আসাটা ছিল ’গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত’ । ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকার উপর আলাদা দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। নানা কৌশলে বামপন্থী সরকারগুলোর স্থলে দক্ষিণপন্থী অথবা রক্ষণশীল শক্তিকে ধীরে ধীরে ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয়। ব্রাজিলের বামপন্থী প্রেসিডেন্ট ডিলমা রুসেফ সরকারকে ’সিভিল ক্যু’ এর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখে, তাকে কারারুদ্ধ রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হলো না, তখন ’মুক্ত’ দুনিয়ার কেউ তাকে অগণতান্ত্রিক অভিহিত করে নি। ব্রাজিলের ক্ষমতায় এখন চরম দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট জেয়ার বোলসোনারো। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের মৃত্যু ও নিকোলাস মাদুরোর ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সকল মিত্ররা লাতিন আমেরিকার ‘শেষ ঘাঁটি’ ভেনিজুয়েলা থেকে প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার সকল উদ্যোগ নেয়। আজকের ভেনিজুয়েলার সংকট সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার মিত্রদের ষড়যন্ত্রে এবং এটা তাদের বৈশ্বিক রণনীতির অংশ হিসেবেই। এটি কোনভাবেই ভেনিজুয়েলার আভ্যন্তরীন সংকট নয়।

শেষ কথা হলো,পশ্চিমা গণমাধ্যমে একটি কথা বেরিয়েছে যে, ’ভেনিজুয়েলার সংকট হলো মুক্ত বিশ্বের সঙ্গে একনায়কত্বের লড়াই’। কথাটাকে সঠিকভাবে বললে বলতে হয়, আসলে ভেনিজুয়েলার লড়াই হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদের নয়া উদারনীতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতিক স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই। বিশ্বের দেশে দেশে এ লড়াই নানাভাবেই চলছে। এখন তা কেন্দ্রীভূত হয়েছে ভেনিজুয়লায়। বাংলাদেশেও প্রায়শই যখন দেখি, গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের নামে কূটনৈতিক শিষ্টাচার অগ্রাহ্য করে বাইরের প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ হয়, ’নির্বাচন’ অগ্রহনযোগ্য হয়েছে অজুহাত তুলে ভেনিজুয়েলার ঝড় এখানেও আসতে পারে না, সে নিশ্চয়তা কে দিতে পারে? আর তখন সেই ঝড় রুখতে গেলে জনগণেরই স্মরণাপন্ন হতে হবে, জনগণকেই আস্থায় নিতে হবে। জনগণ পাশে আছে জেনেও কোনো অজুহাতেই জনগণকে উপেক্ষা করে, অন্য কোনো উপায় দেখলে তার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। এ বড় নগ্ন সত্য। সাম্রাজ্যবাদের সেই পুরনো রূপের নতুন চেহারার কৌশলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ওঠার বিকল্প নাই। তাই প্রয়োজন আজ বিংশ শতাব্দির সংগ্রামের ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনা। ভেনিজুয়েলার জনগণের লড়াই এর পক্ষে বিশ্বব্যাপী সংহতির ডাক উঠুক-এটাই কাম্য। কে জিতবে, তা ইতিহাস নির্ধারিত।

# ড. সুশান্ত দাস, পলিটব্যুরো সদস্য,বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

বর্ষ ৩৯, সংখ্যা ৪৫,  সাপ্তাহিক নতুন কথায় প্রকাশিত।