বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পাকিস্তানিদের হাত থেকে চিনিকলগুলো নিয়েছি। এটা মুক্তিযুদ্ধের ফসল। এই চিনিকল আমরা বিরাষ্ট্রীয়করণ করতে দেব না।
তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনেছেন। এই দেশ জনগণের জন্য। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের জন্য। আমলাদের জন্য নয়। কিন্তু চিনিশিল্প কর্পোরেশনে বসে থাকা কিছু আমলা চিনিকল ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন। তারা চিনিকল চেনেন না, আখ চেনেন না।
সম্প্রতি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) দেশের ১৫টি চিনিকল ও একটি কারখানায় চিঠি দেয়। এতে মিলভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের সংখ্যা এবং গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের আওতায় চাকরিকারীন আর্থিক বিশ্লেষণের পরিমাণ উল্লেখ করে তথ্য চাওয়া হয়। পরে বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান শ্রমিক নেতাদের জানান, দেশের পাঁচটি বাদে বাকি চিনিকলগুলো বেসরকারি খাতে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে চাকরি হারানোর শঙ্কায় পড়েন শ্রমিকরা।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী চিনিকলে যান সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি শ্রমিকদের এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। বলেন, করোনার সময় হ্যান্ডসেক করতে বলা হচ্ছে। আর এখনই শ্রমিকদের ‘গোল্ডেন হ্যান্ডসেক’ করতে বলা হচ্ছে। এটা হতে পারে না। চিনিকল বন্ধ করা যাবে না। এটা বাংলা কথা। চিনিকল বন্ধ করে বাইরের লিকুইড সুগার এনে আমাদের খাওয়ানো হবে, এটাও হবে না। এটা বিষ। আমরা বিষ খেতে চাই না।
বাদশা বলেন, এক কোটি আখচাষিকে বাদ দিয়ে সরকার হতে পারে না। ৭০ হাজার শ্রমিককে বাদ দিয়েও সরকার হতে পারে না। শ্রমিকদের মেরে ফেলার এই চক্রান্ত আমরা সফল হতে দেব না। আজ চিনিকলের শ্রমিকেরা ঠিকমতো বেতন পান না। তাদের জীবন চলে কীভাবে? কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের এক বছরের বেতন বন্ধ থাকলে তার কী অবস্থা হবে?
তিনি বলেন, সারাবিশ্বের চিনিকল লাভ করে। বাংলাদেশের চিনিকল কেন লোকসান করে? চিনিকল রক্ষার জন্য আখের ছোবড়া কাজে লাগাতে হবে। কারখানা আধুনিকায়ন করতে হবে। আর কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তাহলে চিনিকল লাভ করবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি আবারও সংসদে কথা বলব। আমি আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো শুনবেন।
ফজলে হোসেন বাদশা শ্রমিকদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে বলেন, আমি এমপি থাকলেও শ্রমিকদের পাশে আছি, এমপি না থাকলেও আছি। আমরা চিনিকল রক্ষায় শিল্পমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেব। পরে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সেলিমের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আবদুস সেলিম তাকে অবহিত করেন দেশের অন্যান্য চিনিকলের চেয়ে রাজশাহী চিনিকল অনেক ভাল অবস্থানে আছে।
এর আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মজিবর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভায় কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন পাঁচটি রেখে বাকি চিনিকলগুলো বেসরকারি খাতে দেয়া হবে। এতে আমরা হতাশায় পড়ে যাই। তারপর আমরা বিভিন্ন স্থানে গিয়েছি। সাড়া পাইনি। কিন্তু শ্রমিকদের নেতা ফজলে হোসেন বাদশা এসেছেন। এ জন্য তাকে অভিনন্দন জানাই।
বক্তব্য দেন রাজশাহী আখচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইয়াসিন আলী। তিনি বলেন, চিনিশিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আমাদের বলেছিলেন, আপনাদের আখ চাষ করতে কে বলেছে? আমরা তার কথার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা চিনিকল ধ্বংস হতে দেব না। চিনিকল বাঁচাতে বুকের রক্ত দিতে হলে দেব। আমাদের শ্লোগান- ‘চিনিকল বাঁচা, চাষি বাঁচাও, শ্রমিক বাঁচাও’।
সমাবেশ পরিচালনা করেন রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহসভাপতি মেসবাউল ইসলাম মানু। উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, নগর ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নাজমুল করিম অপু, চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোনতাজ আলী প্রমুখ।