জাতীয় সংসদে বাজেট-এর উপর আলোচনায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি এর পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য

0
মাননীয় স্পীকার,
আপনাকে ধন্যবাদ। অভিনন্দন দেশনেত্রী মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। আমরা একাত্মতা জানাচ্ছি আপনার সাথে, সেন্ট মার্টিন বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রত্যাখান করার জন্য। আমরা আপনাকে সমর্থন করি ,আপনার সাথে আছি দেশ রক্ষার সংগ্রামে।
ধন্যবাদ জানাচ্ছি মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে। বর্তমান বাজেট আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবেই সংকটকালীন সময়ের বাজেট। মুদ্রাস্ফিতি, রির্জাভ কমে যাওয়া, জ্বালানী সংকট, ডলার সংকট, নদীর পানির সংকট, সেচ ব্যবস্থার মহাসংকট ইত্যাদি সংকট সর্বত্র।
এমনকি দেশে ক্রমর্বধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। সমগ্র অর্থনীতিতে কর ফাঁকি, কর ছাড়, নি¤œ মজুরী, অনিয়ম, দূর্নীতির কারণে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার সঙ্গে বিদ্যমান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ব্যবস্থার ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক রয়েছে। যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্পদের সুষম বন্টনের বদলে উল্টো সর্বজনের সম্পদ মুষ্টিমেয় ধনী ব্যক্তির হাতে হস্তান্তরিত ও কেন্দ্রীভূত হওয়া স্বাভাবিক মনে যেন না করা হয়। কারণ আমাদের মুক্তিচেতনা ও তার সংবিধান বলে বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। এই প্রবণতাকে প্রত্যাখ্যান না করে, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের আর্দশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ উপাদন না করে খাম্বা বসানো হয়েছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের যে গৌরব অর্জন করেছিলেন, বেশ কিছুদিন যাবত দেশের অধিকাংশ অঞ্চল বিদ্যুৎ সংকটে পড়েছে। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংকট বেশী এর দ্রুত সমাধানে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি।
বাংলাদেশ নদী মার্তৃকদেশ। নদীর শুধুমাত্র কৃষি নয়, পরিবেশও নির্ভর করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যতদিন আমাদের কৃষি থাকবে ততদিন আমরা সংকট মোকাবিলা করতে পারবো। কিন্তু সেই কৃষি আজ চরম পানি সংকটে। আমি এ প্রসঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনাপূর্ণ কৃষির সংকট প্রসঙ্গে বিশেষভাবে বলতে চাই। বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি উত্তরাঞ্চলের কৃষির সম্ভবাময় অংশ। সেখানে সেচ সংকট আত্মহত্যার মত ঘটনা যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সব মৃত্যু ঘটনাতে আমাদের মানবিক দৃষ্টিও অনেক সময় পড়ে না। এ প্রসঙ্গে সমগ্র উত্তরাঞ্চলের সেচ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। উত্তরাঞ্চল শুধু ধানচাষ নয়, মাছসহ বিভিন্ন বৈচিত্রের কৃষি। ঢাকার বাজার থেকে একদিন ফরমালিনকে বিদায় করেছিল উত্তরাঞ্চলের কৃষি। অতএব আমার এলাকার সম্ভাবনা ও সংকট বিষয়ে বলতে চায়।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ বিএমডিএ ভূর্গস্থ পানি নির্বিচার ব্যবহার আজ ভয়াবহতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ৮০ এর দশকের পর গ্রাম্যাঞ্চলে পানি ও সেচ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হতে শুরু করে। সাধারণ নলকূপ গুলো অকেজো হতে শুরু করে। পানির প্রতি এই অঞ্চলের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ঘটে। পুকুর, দিঘি, খাল-বিল নদী-নালা থেকে পানির উৎস হয়ে দাঁড়িছে একটি গভীর নলকূপ নামক মেশিনের উপর। টলটলে পুকুর-বিল-নদীর বদলে নলকূপের মোটা পাইপের উপর। একজন প্রতিদিন ৩০-৩৫ লিটার ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করছে। ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার শূন্য। অন্যদিকে গভীর নলকূপ কেবল পানির উৎস নয়, গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর ও রাজনীতির অনুষঙ্গও বলে। যার দ্বারা ক্ষমতার নতুন সমাজ গঠিত হয়েছে। এখানেই বরেন্দ্র প্রকল্প পানির রাজনীতির এক চাপ এলাকায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে নূতন সামাজিক আধিপত্য। বিগত প্রায় ৪০ বছরে বিএডিসি ও বিএমডিএ কি পরিমাণ ভূর্গভস্থ পানি উত্তোলন করলো এবং এ পানি, জৈব বৈচিত্রে, পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্য অন্যদিকে উৎপাদিত পন্যের মূল্য থেকে যোগ-বিয়োগ করলে হিসাব পরিস্কার হয়ে যাবে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের এ উদ্বেগজনক বিপর্যয় করণীয় নির্ধারণ জরুরী। পদ্মা, মহান্দা, যমুনা, তিস্তা নদী ও বিভিন্ন বিল সমূহ ব্যবহার করে সমগ্র উত্তরাঞ্চলের কৃষির সেচ ব্যবস্থা পুর্ণগঠন জরুরী। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে পর্যালোচনা জরুরী বলে মনে করি। এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের বিপর্যয় জরুরী বলে মনে করি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টিভঙ্গি কৃষি নির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করলাম। যে কৃষি বাংলাদেশকে সব সময় রক্ষা করবে।
মাননীয় স্পীকার,
বাংলাদেশে নির্বাচন সংবিধান অনুসরণ করেই অনুষ্ঠিত হবে। মুক্তিযুদ্ধের আর্দশের শক্তি ক্ষমতায় থাকলে দেশের অগ্রগতি আজ নিশ্চয় বির্তকের বিষয় নয়। সাম্প্রদায়িক শক্তি, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি দেশের অগ্রগতি ও ঐতিহ্যকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও এদেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ বিরোধীনীতির কোন পরিবর্তন ঘটে নাই। তাই বাংলাদেশকে চাপে রাখতে স্যাংশন ও দেশের নির্বাচনের সময় ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এ সময় তাদের এ সকল প্রচেষ্টা নির্বাচনের সময় তার অর্থ ক্ষমতার পরিবর্তনে মদদ যোগানো। আমাদের দেশের জনগণের উপর আমাদের আস্থা আছে। বাইডেন সাহেবের উচিত নিজের ঘর সামলানো। শেখ হাসিনার সরকার রেখেই নির্বাচন হবে। বিএনপি’র উচিত নির্বাচনে আসা, বিদেশী ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দেয়া। তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের শক্তি-অসাম্প্রদায়িক চেতনার অগ্রগতি অপ্রতিরুদ্ধ। অশুভ শক্তির সাথে আতাঁত করা ক্ষতিকর হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে। ধন্যবাদ মাননীয় স্পীকার। জয় বাংলা।
Share.