• ১৮ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় কৃষক সমিতি ও বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়নের যৌথ আহবান

0

২৪ আগস্ট ২০২০ সারাদেশে দাবী দিবস পালন করুণ

পাটকল রক্ষা, পাটচাষি বাঁচাতে ও বন্যাত্তোর কৃষিপুনর্বাসনসহ কৃ-ষকখেতমজুরদের বাঁচাতে ১৫ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করুণ।

প্রিয় বন্ধুগণ,

করোনার পাশাপাশি আম্পান এবং উপর্যুপরি বন্যার সম্মিলিত আক্রমনে কৃষি ও কৃষকের জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ দুরাবস্থা। মুক্তিযুদ্ধের জীবনরেখা, শ্রমঘন কৃষিভিত্তিক শিল্পের মূল স্তম্ভ অবশিষ্ট ২৫টি পাটকল করোনাকালে বন্ধ ঘোষণা করায় পাটের ন্যায্য দাম পাবেন কিনা! এই শঙ্কায় ৬০ লাখ পাটচাষি মহাবিপাকে পড়েছেন। এবারের উপর্যুপরি তিন দফা বন্যায় দেশের ৩৪ জেলার ৫০০ টি চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চরাঞ্চলের ৫০ লাখ মানুষ। পানির তোড়ে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, আবাদী ফসল, মাছের ঘের, আমনবীজ, বীজতলা, গচ্ছিত চাল-ধান-গম সবকিছুই। বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলের জনপদে নদীভাঙনের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ওইসব অঞ্চলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যসংকট। গো-খাদ্য সংকটও চরমে। করোনার পাশাপাশি চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ-বালাই। চরাঞ্চলের মানুষের হাতে এখন কোন কাজ নেই। খেতে নেই কোন ফসল। কাজের অভাবে, খাদ্যাভাবে দিশেহারা চরাঞ্চলের খেতমজুর,মধ্যবিত্ত, গরীব, প্রান্তিক, বর্গাচাষি কৃষক এবং জেলে’রা। চরকে বলা হয়, “কৃষির হিডেন ডায়মন্ড”। বাংলাদেশের প্রায় এক মিলিয়ন চরই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে খাদ্যের আধাঁর। চরাঞ্চলে কৃষির পাশাপাশি গ্রামঞ্চালে বেকার ছাত্র-যুবসহ অসংখ্য উদ্যোক্তা পোলট্রি শিল্প গড়ে তুলেছে। সবমিলে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে। দেশে আছে ৪ লাখের বেশী ডেইরি খামার। আছে লাখ লাখ মাছের খামার ও নার্সারী। করোনার মহামারি এই দূঃসময়ে কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট এই খাতগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে দেশ মহাদূর্যোগ পড়বে।

প্রিয় সাথী’রা,

পুর্বপ্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার-খাদ্য সংরক্ষণে ২০০ প্যাডিসাইলো নির্মাণ করবে। কিন্তু সরকার তা করেনি। করোনাকালে সরকার গুদামের অভাবে, আমলাতান্ত্রিক নানা অনিয়ম ও জটিলতার কারণে ধান-চাল-গম সংগ্রহ করতে পারেনি। ধান, গমসহ খাদ্যসামগ্রী মজুত করেছে বড় চালকল মালিক ও জুতদার’রা। চালকল মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে সরকারী গুদামে চাল সরবরাহ করে নাই। চুক্তি করে ব্যবসায়ীরা চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। সরকার ব্যবসায়ীদের কাছে মাথানত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অপরাধের শান্তি নিশ্চিত করা যায়নি। এখন ব্যবসায়ীরা পায়তারা করছে শুল্ক কমিয়ে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করার। করোনাকালে সরকার ৫ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের প্যাকেজ ঘোষণা করে। আমাদের দাবি ছিল ২% সরলসুদে সরাসরি শস্যখাতে আরো ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের। সেটা করা হয়নি। যেটুকু আছে-তার সুবিধা বর্গাচাষি, ক্ষুদ্র, প্রান্তিক, গরীব এমনকি মধ্যচাষিরাও পাচ্ছেনা, পাবেনা। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে তার সুফলও কৃষকের কাছে নয়, পুঁজির মালিকদের হাতে চলে যাচ্ছে। খাদ্য মজুত এবং খাদ্যের বাজারের ওপরও সরকার, ভোক্তা ও কৃষকের কোন নিয়ন্ত্রন নাই। চালের দাম ও বাজার নিয়ন্ত্রন করছে বড় বড় চাল কল মালিকরা। চাল আমদানি ও রফতানির ক্ষেতে তাদের ভূমিকাই প্রধান। ফলে, দেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। করোনাকালে দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ। অনলাইন শিক্ষায় কৃষক-খেতমজুরের ছেলেমেয়েরা অর্থাভাবে-এর সুযোগ গ্রহন করতে পারছে না। ফলে বাড়ছে বৈষম্য! এমতাবস্থায়, পাটকল রক্ষা, বন্যাত্তোর কৃষি পুনর্বাসনসহ কৃষক-খেতমজুর এবং দেশ বাঁচাতে ১৫ দফা দাবিতে আগামী ২৪ আগস্ট ২০২০ প্রতিটি জেলা/মহানগর/উপজেলায় স্বাস্থবিধি মেনে মানববন্ধন, স্বারকলিপি প্রদান এবং বিক্ষোভ কর্মসুচিপালন করুন।

১। পাট শিল্প বাঁচাও,পাটচাষি বাঁচাও। পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত কর; রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্প পুনরায় চালু কর। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, জাতীয় স্বার্থে পাটশিল্প রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোল;

২। আম্পান ও বন্যা পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগঘোষণা; আম্পান ও বন্যা দুর্গতদের জন্যবিনামূল্যে ৬ মাসের খাদ্য সহায়তা প্রদান;

৩। বন্যা কবলিত এলাকায় কৃষকের সব ধরণের কৃষিঋণ, এনজিও ঋণ মওকুফ;রুরিজ ভিত্তিতে বন্যাকবলিত কৃষকদের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করে নগদ অর্ প্রদান; বিনামূল্যে আমন চারা বিতরণ, রবিশস্যের জন্য-গম, আলু,ভুট্টা, সবজি এবং ডালজাতীয় চাষ করার জন্য বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ;

৪। চরাঞ্চলের খামারিদের গবাদি পশু সংরক্ষণে আলাদা আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও গো-খাদ্যের সংকট নিরসন; সুপীয় পানির ব্যবস্থা, পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ, সু-চিকিৎসা নিশ্চিত; নদীভাঙন রোধে বাঁধ মেরামত-সংস্কার, নদীশাসন, নদী খনন, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন;

৫। খোদ কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় ও তা গুদামজাত ও বিপনন করতে প্রতি উপজেলায় প্যাডিসাইলো নির্মাণ করা এবং তার পরিচালনার ভার সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রোয়ার কো-অপারেটিভের (উৎপাদক সমবায়) উপর ন্যস্ত করা;

৬। ‘৮৭-এর ভুমিসংস্কার আইনের সুপারিশ নুযায়ীঅ বর্গাচাষিদের সাথে বর্গাচুক্তিপত্র সম্পাদন,বর্গাস্বত্ব প্রদান করা এবং সমিতিতে সংগঠিত করে কৃষি ঋণ এবং কৃষি প্রনোদনাদানপ্র করা।

৭। খাসজমি, জলমহালের উপর প্রকৃত ভূমিহীন,মৎস্যজীবীদের অধিকার প্রদান করা;

৮। ৭২ সালের সংবিধানের নির্দেশনা মোতাবেক কৃষি সমবায়-কে কৃষি উৎপাদনের প্রধান হাতিয়ারে পরিণত করা; উৎপাদনের উপকরণ-সার, বীজ, কৃষিযান্ত্রকীকরণের সকল যন্ত্রপাতি পুঁজিপতি ণিরশ্রে হাতে না দিয়ে এসব সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্রদান করা;

৯। সারা দেশের খেতমজুরদের নিবন্ধন করা; ৪০ দিনের কাজ বাড়িয়ে খেতমজুরদে জন্য ১৫০ দিনের কাজের গ্যারান্টি প্রদান করা; কাজ না থাকলে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা;

১০। গ্রাম ও শহরের ৬০ বছরোর্ধ খেতমজুর, ভূমিহীন শ্রমজীবি মানুষের জন্য সার্বজনিন পেনশন ভাতা প্রদান করা; গ্রাম ও শহরের খেতমজুর শ্রমজীবি ও কর্মজীবী গরীব মানুষের জন্যরেশনিং ব্যবস্থা চালু করা;

১১। গ্রামের কৃষক-খেতমজুর ও গ্রামীণ শ্রমজীবীদের জন্য বিনামূল্যের সবধরণের চিকিৎসার ব্যয়ভার রাষ্ট্রকর্তৃক গ্রহন ও তাদের সন্তানদের শিক্ষাভাতা প্রদান করা;

১২। গ্রামাঞ্চলের কৃষক-খেতমজুর-গ্রামীন শ্রমজীবী মানুষের সন্তানদের অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে তাদের ল্যাবটব,স্মাটফোনের ব্যবস্থা জন্য ও আনুসাঙ্গিক অন্যান্য সুযোগ সুবিধাষ্ট্রকেরা নিশ্চিত করতে হবে;

১৩। মজুত বিরোধী আইনের কঠোরপ্রয়োগ নিশ্চিত। চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সরকার কর্তৃক প্রনীত চুক্তিনামা অনুযায়ী সরকারী গুদামে সরবরাহ করতে বাধ্য করা। এদের খাদ্য মজুদ তদারকী জন্য “কন্ট্রোল অব এসেনশিয়াল কমোডিটিস এ্যাক্ট” আইনের কঠোর প্রয়োগ।

১৪। হাওর-বাওর চরাঞ্চালসহ সমগ্র অঞ্চলে কৃষিজীবী নারীদের বিশেষ প্রণোদনা(স্বাস্থ্য, খাদ্য ও বাসস্থান) প্যাকেজের আওতায় আনতে হবে।

১৫। ছোট ছোট খামার (পোলট্রি, ডেইরি, মৎস্য খামার, নার্সারী) সমূহকে লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে তাদের স্বল্প সুদে ঋণও পর্যাপ্ত প্রণোদনা দিতে হবে।

Share.