ফজলে হোসেন বাদশা
গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা ফজলে হোসেন বাদশা ̄^ীয় কর্ম ̧ণেই রাজশাহীসহ
সারাদেশে সুপরিচিত। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও জীবন দর্শন আজকের এবং আগামী
প্রজন্মের সামনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত, একথা বেশ জোরের সাথেই বলা যায়
আপসহীন, সৎ নীতিবাদি ও আদর্শম-িত চরিত্রের অধিকারী জননেতা ফজলে হোসেন
বাদশা সর্ব ̄Íরের মানুষের বড়ই আপনজন। তাঁর নেতাসুলভ আচার-আচারণ অবশ ̈ই
প্রশংসার দাবি রাখে। সবচেয়ে বড় কথা তাঁর সততা, মানবপ্রেম এবং দেশপ্রেম তাঁকে
ত...ণমূল সাধারণ পর্যায়ের মানুষের কাছে অবাধে মেলামেশার সুযোগ করে দিয়েছে।
আর যে কারণে তাঁর গ্রহণযোগ ̈তাও আশাকচুম্বী। নিজের দল বা ১৪ দলের নেতা
হিসেবে শুধু নয়, ব ̈ক্তিগত কর্মপ্রয়াসে বা ̧ণাবলি তাঁকে বিভিন্ন দল ও গোত্রের মানুষের
কাছে একবুক কাছের মানুষ ও প্রিয়জন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তিনি এমন ধরনের
রাজনীতিক যে, সর্বদাই তাঁর দরোজা সবার জন ̈ই উন্মুক্ত। তিনি সবার কথাই মনোযোগ
সহকারে শোনেন এবং আন্তরিকভাবে সমস ̈া সমাধানের চেষ্টা করেন। সতি ̈ কথা বলতে
কীÑ আজকের পেশি শক্তি, অবৈধ অ ̄¿ এবং কালো টাকার কাছে রাজনীতি ডিফিকাল্ট
হয়ে গেছে। সেখানে তাঁর মতো সহজ, সরল,সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক বিরল
দৃষ্টান্তের মতো। ছাত্রজীবনেই তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি এবং ২০০৮ সালে জাতীয়
সংসদ সদস ̈ হিসেবে রাজশাহী সদর-২ আসনে নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে এবং পরে
তিনি সর্বদাই রাজশাহীর অর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষে দল-মত নির্বিশেষে সর্ব ̄Íরের
মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন ও সংগ্রামে নেত...ত্ব দান করেছেন এবং দাবি আদায়ের
মধে ̈ দিয়ে নিজের অব ̄’ানকে পাকাপোক্ত ও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম
হয়েছেন। এজন ̈ তাঁকে বহুবার জেল-জীবনসহ নানা অত ̈াচার ও নির্যাতন সহ ̈ করতে
হয়েছে। মোটকথা, তাঁর সাহসী বলিষ্ঠ ও আপসহীন নেত...ত্ব দানের কারণেই কাক্সিক্ষত
লক্ষ ̈ অর্জনে তিনি সমর্থ হয়েছেন। কোনো রকমের প্রলোভনের কাছে বা ব ̈ক্তি ̄^ার্থ
উদ্ধারের লক্ষে ̈ তিনি কখনই তাঁর মেধা, মনন ও মি ̄Íষ্ক বিμি করেননি। আর এজন ̈ই
তিনি তাঁর ̄úষ্টবাদি চারিত্রিক বৈশিষ্টে ̈র মধ ̈ দিয়ে দায়িত্ব ও কর্তব ̈ সঠিকভাবে পালনে
সর্বদাই সোচ্চার হয়েছেন।
ফজলে হোসেন বাদশা ১৯৫২ সালের ১৫ অক্টোবর রাজশাহী মহানগরীর হড়গ্রাম
বাজারে নিজবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অ ̈াডভোকেট খন্দকার আশরাফ
হোসেন এবং মাতা দিলারা হোসেন। তাঁর পিতা রাজশাহী জজকোর্টের একজন বিশিষ্ট
আইনজীবী ছিলেন। তিনি রাজশাহীতে প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং
ভাষাআন্দোলন হতে ̄^াধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত ̧রুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি
রাজনীতি ছাড়াও আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন কর্মকা-ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন।
তিনি রাজশাহী বারে আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন
৮
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: জাতীয় সংসদ ও বাংলাদেশ
এবং রাজশাহী আইন কলেজ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রেখেছেন। ফজলে হোসেন
বাদশার মা দিলারা হোসেন মূলত একজন আদর্শ গৃহিনী, সে সঙ্গে ̄^ামী এবং পুত্রের
সার্থক রাজনৈতিক জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সর্বদাই সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত
করেছেন। তিনি ̄^নির্ভর হওয়ার জন ̈ গরিব ও দু ̄’ মহিলাদের উপার্জনের লক্ষে ̈ রাজশাহী
মহিলা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন। এই প্রতিষ্ঠানের
সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ভাষাসৈনিক বেগম মনোয়ারা রহমানকে তিনি
সর্বদাই সহযোগিতা করেছেন। সমাজের পিছিয়ে-পড়া নারীদের ̄^াবলম্বী হিসেবে গড়ে
তোলার পেছনে তাঁর অবদান ̄§রণযোগ ̈। জনাব বাদশার জীবন সঙ্গিনী তসলিমা খাতুন
একজন কলেজ শিক্ষক এবং নারী অধিকার আদায়ে বাংলাদেশ নারীমুক্তি সংসদ কেন্দ্রীয়
কমিটির অন ̈তম নেত্রী। আদর্শ পিতা ও মায়ের ক...তিসন্তান ফজলে হোসেন বাদশা
১৯৬৭ সালে রাজশাহী কলেজিয়াট ̄‹ুল থেকে এসএসসি, ১৯৭০ সালে নিউ গভ.
ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি, রাজশাহী বিশ^বিদ ̈ালয় হতে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স
ডিগ্রিসহ এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রাজশাহী জজকোর্টের একজন
অ ̈াডভোকেট হিসেবেও নিবন্ধিত রয়েছেন। তাঁদের একমাত্র কন ̈া ফাহিজা নুযহাদ জয়ী
কম্পিউটার প্রকৌশলে উচ্চশিক্ষর্থে ইউরোপের একটি বিশ^বিদ ̈ালয়ে অধ ̈য়নরত।
প্রগতিশীল পরিবারিক ঐতিহে ̈র ধারায় জননেতা ফজলে হোসেন বাদশার রাজনৈতিক
জীবন শুরু। ঊনসত্তরের ছাত্র গণ-আন্দোলনের প্রাক্কালে তিনি পূর্বপাকি ̄Íান ছাত্র
ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের প্রথমে সদস ̈ এবং পরে পশ্চিমাঞ্চলের আঞ্চলিক কমিটির
সভাপতি ছিলেন। পিতার প্রগতিশীল জীবনাদর্শের প্রভাব তার মধে ̈ পরিলক্ষিত হয়।
সে সঙ্গে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,
মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, কমরেড অমল সেন, কমরেড
রাশেদ খান মেনন, কমরেড মণি সিং এবং রাজশাহীর রাজনীতিতে বটবৃক্ষ জাতীয়
নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান, জননেতা এম আতাউর রহমান, অ ̈াডভোকেট
মহসীন প্রামাণিক, কমরেড মহসীন আলী, অধ ̈াপক রুহুল আমিন প্রামাণিক প্রমুখ
জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেত...বৃন্দ তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্র ̄‘তি পূর্বে
অনুপ্রেরণার মূল উৎস হিসেবে তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনে
তৎকালীন পূর্বপাকি ̄Íানে রাজশাহীতে ব ̈াপক গণজাগরণ সৃষ্টি হয়। ১৯৬৯ সালের ১৮
ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ^বিদ ̈ালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা
এবং রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র নূরুল ইসলাম শহীদ হন। দেশব ̈াপী তুমুল গণ-
আন্দোলনের মুখে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের পতন ঘটে এবং আরেক ৈ ̄^রশাসক
ইয়াহিয়া খান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জাতির সেই সংকটময় মুহূর্তে তরুণ ছাত্রনেতা
ফজলে হোসেন বাদশা পাকি ̄Íানি ৈ ̄^রশাসকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রামে সμিয়
ভূমিকা পালন করেন । বিশেষত সে সময় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে তিনি
উদে ̈াগী ছিলেন।
এরপর তারুণে ̈র বিপুল উদ্দ ̈মে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাজশাহী
পুলিশ লাইনে পুলিশের প্রতিরোধ যুদ্ধসহ শহরের পশ্চিমাঞ্চলে যুদ্ধের শুরুতেই তিনি
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: জাতীয় সংসদ ও বাংলাদেশ
৯
ছাত্র ও যুবকদের সংগঠিত করেন। তিনি প্রথমে ভারতের ত্রিপুরা রাজে ̈র আগরতলার
মেলাঘর মুক্তিযোদ্ধা ক ̈াম্পে যোগদান করেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার
পানিপিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক ̈াম্পে যোগ দেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে কিছু
সময় ধুলাউড়ি মুক্তিযোদ্ধা ক ̈াম্পেও অব ̄’ান করেন ।
মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ৭৫-এর পট-পরিবর্তনে সামারিক জান্তা পাকি ̄Íানি ধারার
প্রতিμিয়াশীল রাজনীতি পুনঃপ্রবর্তন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী তৎপরতা শুরু করলে
জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা মুক্তিযুদ্ধের অসম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের
লক্ষে ̈ ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করতে উদে ̈াগ গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি রাজশাহী
বিশ^বিদ ̈ালয়ে ছাত্রসমাজের অধিকার আদায়ের লক্ষে ̈ পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
একই সাথে বিশ^বিদ ̈ালয় থেকে ̄^াধীনতা বিরোধীদের বিতাড়নের আন্দোলনের নেত...ত্ব
দেন। এজন ̈ বার বার গ্রেফতার হয়ে রাজশাহী ও ঢাকা কারাগারে
অন্তরীণ থাকেন তিনি;
সেই কঠিন সময়েও কারাবন্দীদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন
গড়ে তোলেন। কারা-আন্দোলন দমনে কারাগারে ̧লি চলে। তিনজন বন্দী মৃতু ̈বরণ
করেন। আন্দোলন দুর্বার হলে বিএনপির তৎকালীন ̄^রাষ্টমন্ত্রী কারাগারে আসেন।
ফজলে হোসেন বাদশাসহ কারাবন্দী নেতাদের সাথে আলোচনা করে তিনি বন্দীদের
অনেক দাবি মেনে নেন। তখন কারাগারের ভিতরে মৃত তিন বন্দীর ̄§রণে একটি
শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয় যা এখনও বিদ ̈মান। রাজশাহী কারাগারের এই আন্দোলন
জাতীয় রাজনীতির এক মৌলিক পরিবর্তন ঘটায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি প্রথম বারের
মতো জোটবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক সংগ্রামের উদে ̈াগ গ্রহণ করে।
১৯৭৮ সালে রাজশাহী বিশ^বিদ ̈ালয়ে তাঁর নেত...ত্বে ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে ̈ ছাত্র-
আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে তিনি ছাত্রদের গণ-অনশনের ডাক
দেন। সেই আন্দোলনে সঠিক ও সাহসী নেত...ত্ব দানের কারণে সাধারণ ছাত্রদের কাছে
তার গ্রহণযোগ ̈তা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। সে সময় জেনারেল জিয়াউর রহমানের দুইমন্ত্রী
অনশনরত ছাত্রদের দেখতে রাজশাহী বিশ^বিদ ̈ালয়ে আসেন। প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ
বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ছাত্ররা সেই মন্ত্রীদ্বয়কে আটক করে। আলোচনার মাধ ̈মে
একটি সমাধানের পর ছাত্ররা দুই মন্ত্রীকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু তারপরেও বিশ^সঘাতকতা
করে তৎকালীন সরকারের পুলিশ ও বিডিআর সাধারণ ছাত্রদের ওপর ̧লি চালায়।
পরবর্তীতে সরকার ফজলে হোসেন বাদশাসহ বহু ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে জেলে
পাঠায়। কারামুক্তির পর ১৯৮০ সালের ৬ ডিসেম্বর জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা
বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী প্রতিষ্ঠা করেন এবং সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
ঐ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই তিনি রাজশাহী বিশ^বিদ ̈ালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের ভিপি
নির্বাচিত হন।
এর মধে ̈ ক্ষমতায় আসে আরেক সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ। ছাত্রনেতা ফজলে
হোসেন বাদশা এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ^বিদ ̈ালয়ে প্রথম
প্রতিবাদ ও কালো পতাকা প্রর্দশন করেন এবং সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে (বয়কট)
আন্দোলনের নেত...ত্ব দেন। ৈ ̄^রাচার বিরোধী সংগ্রাম গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম
১০
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: জাতীয় সংসদ ও বাংলাদেশ
পরিষদ গঠন করেন। ১৯৮৩’র ১৪ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ মধ ̈-ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে
কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি প্রথম সারিতে ছিলেন। ৮০’র দশক জুড়ে প্রতিμিয়াশীল
এরশাদ ৈ ̄^রাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিহত হন ছাত্রমৈত্রীর নেতা শহিদ ড. জামিল
আক্তার রতন, জুবায়ের চৌধুরি রিমু, রূপমসহ অনেকেই। এ সকল হত ̈াকা- ছিল
প্রগতিশীল রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিμিয়াশীল জামাত-শিবির চμের চূড়ান্ত হুমকি।
মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী জামাত-শিবিরের এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ছাত্র-যুবদের
ঐক ̈বদ্ধ করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষে উল্লে ̈খযোগ ̈ ভূমিকা রাখেন জননেতা
ফজলে হোসেন বাদশা। ঢাকায় সচিবালয় ঘেরাও আন্দোলনে নেতৃত্বদানের কারণে
১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সামরিকবাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে এবং
ক ̈ান্টনমেন্টে নিয়ে গিয়ে ৯ দিন তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। মূলত ৈ ̄^রাচার
বিরোধী সংগ্রামের মধ ̈ দিয়ে ৯০-এর গণঅভু ̈ত্থান সংগঠিত হয় এই সংগ্রামের জননেতা
ফজলে হোসেন বাদশার ভূমিকা ছিল আপোসহীন ও বলিষ্ঠ। দেশকে গণতন্ত্রের ধারায়
ফিরিয়ে আনতে তাঁর ছিল অনন ̈ ভূমিকা ।
১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটবু ̈রোর সদস ̈পদ লাভ করেন।
নিষ্ঠার সাথে পার্টির দায়িত্ব পালনের লক্ষে ̈ তিনি রাজশাহীসহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে
শ্রমজীবী মানুষকে সংগঠিত করার সুযোগ পান। ১৯৯৬ সালে বামজোট, পরবর্তীতে ১১
দল গঠনসহ সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে ছিলেন নেত...ত্ব দিয়েছেন। ১৯৭২ সালের
সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জাতিকে কলঙ্কমুক্ত শহিদ জননী জাহানারা ইমামের ঘাতক-
দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনসহ জাতীয় ৯০ পরবর্তী সকল জাতীয় গণতান্ত্রিক
লড়াইয়ে ছিল তার ̧রুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ। ১৯৯৫ সালে নাচোল বিদ্রোহের অগ্নিকন ̈া ইলা
মিত্রকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে নিয়ে আসেন এবং তাঁকে গণসংবর্ধনা
দেন। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে রানীমাতা ইলা মিত্র এই সম্মান লাভ করে আনন্দ ও
গৌরব বোধ করেন। এছাড়াও বাংলা সাহিতে ̈র ̄^নামখ ̈াত লেখক মহাশে^তা দেবীকে
তিনি রাজশাহী ও নওগাঁয় আদিবাসীদের মধে ̈ নিয়ে আসেন জননেতা ফজলে হোসেন
বাদশা।
এছাড়া আদিবাসীদের রাষ্টীয় ̄^ীক...তি আদায়ের লক্ষে ̈ ১৯৯৩ সালে সকল আদিবাসীদেরকে
সংগঠিত করেন। আদিবাসীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের অন ̈তম সংগঠক জননেতা
ফজলে হোসেন বাদশা। আদিবাসীদের জীবন মান ও জাতিসত্তার লড়াইয়ে ২৫ বছর
পরে আজ তারা প্রায় অনেক দাবি রাষ্টীয়ভাবে ̄^ীক...ত।
২০০১ সালে জামাত-বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে সাম্প্রদায়িক ও প্রতিμিয়াশীল
শক্তির তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। এ সময় ফজলে হোসেন বাদশা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ^াসী
মানুষদের নিয়ে তাদের অশুভ তৎপরতা বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেত...ত্ব দান করেন।
মিটিং, মিছিল, সভা ও সেমিনার আয়োজনের মধ ̈ দিয়ে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়া
হয়।
এরই মধে ̈ ২০০২ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে
ফজলে হোসেন বাদশা নাগরিক কমিটির পক্ষে হতে নির্বাচন করেন। রাজশাহী
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: জাতীয় সংসদ ও বাংলাদেশ
১১
মহানগরীর জনগণ তাঁকে নির্বাচিত করলেও কারচুপির মাধ ̈মে নির্বাচনের রায় পরিবর্তন
করা হয়। তৎকালীন সরকারের এ ধরনের কার্যμম রাজশাহীসহ সারাদেশে নিন্দার
ঝড় তোলে। আর এজন ̈ একজন সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক হিসেবে সর্ব ̄Íরের
মানুষের কাছে জননেতা ফজলে হোসেন বাদশার গ্রহণযোগ ̈তা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।
২০০৪-এ জামাত-বিএনপি সরকারের ছত্রছায়ায় রাজশাহীর বাগমারায় জামাত ও
শিবিরচμ বাংলাদেশকে পাকি ̄Íান বানানোর লক্ষে ̈ তাদের জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালিয়ে
যেতে থাকে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বাংলাভাই সৃষ্টি হয়। রাজশাহী মহানগরীতেও
বাংলাভায়ের নেত...ত্বে জঙ্গিদের সশন্ত্র মিছিল হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জননেতা ফজলে
হোসেন বাদশা বাগমারাতে হাজার হাজার মানুষের সহায়তায় সন্ত্রাস প্রতিরোধের
মহাসমাবেশ আয়োজন করেন। এ অব ̄’ার প্রেক্ষাপটে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা
এবং সারাদেশে একসঙ্গে বোমা বিস্ফোরণের পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে
একত্রিত করে ১৪ দল গঠিত হয়। ১৪ দল গঠনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ১৪
দল পরিচালনার একজন বলিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে তিনি সকলে কাছে সমাদৃত। দেশে
গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন ̈ আর আপসহীন গতিশীল ভূমিকা জনমতে
এবং রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। বাংলাভাইয়ের বিরুদ্ধের তিনি জীবন বাজি রেখে
যে ভূমিকা পালন করেন আমাদের উগ্রসাম্প্রদায়িকতা বিরোধী রাজনীতির ইতিহাসে
উল্লেখ ̈যোগ ̈ অধ ̈ায় হিসেবে বিবেচিত।
তিনি ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে নবম ও দশম জাতীয়
সংসদে নির্বাচিত হন।
সংসদ সদস ̈
হিসেবে জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা মহান জাতীয় সংসদে রাজশাহীকে
প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ ভূমিকা রেখে এক দৃষ্টান্ত ̄’াপন করেছেন। সৎ,
যোগ ̈ নেতা হিসেবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ ̈ নেতায় পরিণত হয়েছেন। তিনি
বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতে দায়িত্বে পালনে যোগ ̈তার পরিচয় প্রদান করেছেন। সর্বশেষ
̄’ানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন সংসদীয় কমিটির সদস ̈ হিসেবে সμিয়তা ও
যোগ ̈তার পরিচয় অর্জন করেন। এমনকি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উন্নয়নেও
̧রত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সংসদে বিভিন্ন ধরনের কমিটিতেও যেমন, হাউজ কমিটি,
সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি কমিটি, ও বিভিন্ন সংসদীয় তদন্ত কমিটিতেও ̧রুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করেছেন। জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার
প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ̄^ীক...তি হিসেবে আদিবাসী-বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি
হিসেবে সারাদেশে অধিবাসী ও ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করেন। বাজেট, খাদ ̈
অধিকারসহ জনগণের বিভিন্ন ন ̈ায় সংগত দাবি বা ̄Íবায়নে সংসদ সদস ̈ হিসেবে
জাতীয় ক্ষেত্রে ̧রুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশে বিদেশে সংসদ সদস ̈ হিসেবে
প্রশংসা অর্জন করেন তিনি একমাত্র সংসদ সদস ̈ যিনি বাংলাদেশে প্রতিনিধি হিসেবে
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার বিরল গৌরব
অর্জন করেন।
রাজশাহীর উন্নয়নের তার ভূমিকা তুলনাহীন। শিক্ষানগরী হিসেবে রাজশাহীর ঐতিহ ̈
রক্ষায় নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ̄’াপন ও ̄‹ুল কলেজ, মাদ্রাসার উন্নয়নে এক বৈপ্লবিক
১২
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: জাতীয় সংসদ ও বাংলাদেশ
ভূমিকা রাখেন। চিকিৎসা বিশ^বিদ ̈ালয়, হার্ট ফাউন্ডেশনের নতুন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ
সকল হাসপাতালের উন্নয়ন সাধন করেন। রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ, বঙ্গবন্ধুর আইটি
ভিলেজ, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল ̈ান্ট, রেশম কারখানা পুনরায় চালু করা, বিমান বন্দর সচল
করা, ঢাকা রাজশাহী রেল যোগাযোগ উন্নয়নে নতুন সংযোজন পৃথক রেল সেতু ̄’াপনের
দাবি সংসদে গৃহীত হয়ে এখন বা ̄Íবায়নের পথে। যমুনা নদীর উপর দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু
সেতু নির্মাণের দাবি সংসদে উপ ̄’াপনের মাধ ̈মে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের মনে
আলোড়ন সৃষ্টি করেন। রাজশাহীকে আধুনিক ও সর্ব ̄Íরের জনগণের নগর হিসেবে গড়ে
তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজশাহী থেকে কলকাতা (হাওড়া) রেল যোগাযোগের
দাবি প্রথম উপ ̄’াপন করেন এখন এটা বা ̄Íবায়নের পথে। রাজশাহীর যুবসমাজের
কর্মসং ̄’ানের দাবি তিনি বাজেট আলোচনায় উত্থাপন করেন। রাজশাহীতে শিল্পাঞ্চল
সৃষ্টি করে কর্মসং ̄’ানের উদে ̈াগ গ্রহণে তিনি তৎপর রয়েছেন। ক...ষক যাতে ক...ষি পণে ̈র
ন ̈ায ̈ মূল ̈ পায় তার জন ̈ বিমান বন্দর উন্নয়নের মাধ ̈মে আন্তর্জাতিক বাজারে রাজশাহীর
কৃষকদের পণ ̈ রপ্তানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভেজাল সার, ভেজাল কীটনাশক দ্রব ̈
রোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক...ষকদের বঞ্চনার প্রতিকারের জন ̈ তিনি “ক...ষি আদালত”
প্রতিষ্ঠার দাবি তুলে তিনি আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। কারখানা শ্রমিকদের ওপর অন ̈ায়ের
প্রতিকারের জন ̈ যেমন শ্রমআদালত আছে একইভাবে ক...ষি আদালত এখন জাতীয়
দাবিতে পরিণত হয়েছে । তিনি দরিদ্র মানুষের জন ̈ খাদ ̈ অধিকার আইন প্রণয়নের
জন ̈ দাবি জানিয়ে আসছেন।
ফজলে হোসেন বাদশা তার বর্ণাঢ ̈ রাজনৈতিক জীবনে জাতীয় সংসদ সদস ̈ হিসেবে,
দলীয় কাজে এবং ব ̈ক্তিগত প্রয়োজনে বহুদেশে ভ্রমণ করেছেন। আন্তর্জাতিক মানের
বিভিন্ন সেমিনার ও সম্মেলনে অংশগ্রহণ অথবা মূল বক্তা হিসেবে তিনি বিদেশে
গেছেন। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে এবং সংসদ সদস ̈ হিসেবে বিভিন্ন
দেশে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি ভারত, ফ্রান্স, সুইজারল ̈ান্ড, পোল ̈ান্ড,
ইরান, কাজাকি ̄Íান, তুর ̄‹, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল ̈ান্ড, ইংল ̈ান্ড, জার্মান, রাশিয়া,
চীন, জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা, হংকং প্রভ...তি দেশ ভ্রমণ করেছেন। ২০১১ সালের
ডিসেম্বর মাসে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জাতিসংঘের সাধারণ
পরিষদের এক অধিবেশনে যোগদান করেন এবং সেখানে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব
করে বক্তব ̈ উপ ̄’াপন করেন।
ফজলে হোসেন বাদশা আপসহীন ও সংগ্রামী মানুষের নাম। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ছাত্র
রাজনীতি তথা সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উল্লেখ ̈যোগ ̈ সংযোজন জননেতা
ফজলে হোসেন বাদশা। জাতীয় সংসদ সদস ̈ হিসেবে তিনি অত ̈ন্ত সততা, দক্ষতা,
ও বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।