ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ড্রেস রিহার্সাল ছিল। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানই এদেশের ছাত্র, যুবক, শ্রমিক-কৃষকদের মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরতে মানসিকভাবে ও সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত করেছিল। সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের একক নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তারও ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানই বঙ্গবন্ধুকে এই অভিধায় অভিষিক্ত করেছিল। আর এই গণঅভ্যুত্থানের সূচীমুখ খুলে দিয়েছিলেন শহীদ আসাদ। আর আটষটির শেষে এসে আয়ূইবী শাসন উৎখাতের চূড়ান্ত আন্দোলনটি শুরু করেছিলেন মওলানা ভাসানী কিন্তু এখন অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ দিবসও সংবাদপত্র- টেলিভিশন সেভাবে জায়গা পেলেও শহীদ আসাদ, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সেভাবে জায়গা পায়না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রাক ঊনসত্তর আন্দোলন অভ্যুত্থানের বিষয় জায়গা পায়নি।
আজ ২৪ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত “আসাদ থেকে গণঅভ্যূত্থান ঃ বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর’ শীষর্ক আলোচনা প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে পার্টি সভাপতি জননেতা কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি একথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আবুল
হোসাইন।
আলোচনায় মেনন বলেন, আয়ুইব শাসকের দাপটে সমস্ত আন্দোলন যখন স্তিমিত, রাজনীতিক ও ছাত্র নেতারা অধিকাংশ জেলে অথবা আত্মগোপনে, সেনাছাউনীতে রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য তথা ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলা চলছে সে সময় বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের মাধ্যমে মওলানা ভাসানীকে খবর পাটিয়েছিলেন তার মুক্তির জন্য আন্দোলন করতে। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের একনিষ্ট সমর্থক এবিএম মুসা তার বইতে একথা লিখে গেছেন। আটষট্টি ৬ ডিসেম্বর আয়ুইবের চূড়ান্ত পতনের লক্ষ্যে মওলানা ভাসানী যে আন্দোলনের সূচনা করেন তারই ধারাবাহিক কর্মসূচীতে ঊনত্রিশে ডিসেম্বরের হাট হরতালে পুলিশের লাঠিতে মাথা ফেটে গিয়েছিল শহীদ আসাদের। ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে এই নেতা ছাত্রজীবন শেষে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই আসাদ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১-দফা দাবির আন্দোলনের কর্মসূচীতে জ¦র নিয়েও মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশের সরকারি গুলিতে শহীদ
হয়েছিলেন তার কথা অথবা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কথা স্মরণ না করে মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করা যায় না। ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে চত্বরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজিত এইআলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক
কমরেড কিশোর রায়, কমরেড তৌহিদ, কমরেড সাদাকাত হোসেন খান বাবুল প্রমুখ।