বহুপাক্ষিক ছাড়া একপেশে যোগাযোগ (করিডোর) ভারসাম্যহীন হবে— বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি

0

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ২৮ ও ২৯ জুনের দু’দিনের সভা আগামী ৫ অক্টোবর ঢাকায় বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পার্টি ঘোষিত ৫ দফা দাবির ভিত্তিতে সমাবেশ ও মিছিল, জুলাই—আগস্ট ঘোষিত সাংগঠনিক মাসে জেলায় জেলায় পার্টি সদস্যদের সাধারণ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল এবং আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠানের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। সভায় পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক সাংগঠনিক রিপোর্ট প্রণয়ণের জন্য চার সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। পার্টির ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি নিম্নরূপ—
১। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে এযাবত গৃহীত ব্যবস্থার পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা,
২। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ সম্পদ অর্জনকারীদের খুঁজে বের করে তাদের শাস্তি ও অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য ‘বিশেষ কমিশন’ গঠন করা,
৩। ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্য লুটপাট বন্ধ কর। সুশাসন ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে ‘ব্যাংক কমিশন’ গঠন কর,
৪। অর্থ পাচার রোধ কর, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ,
৫। ঋণ খেলাপির ক্ষেত্রে অসংগতিপূর্ণ ব্যবস্থাদি রোধ করে ঋণ খেলাপিদের চিহ্নিত করে অর্থ আদায় ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ বিচারের ব্যবস্থা করা।
এর আগে পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা উত্থাপিত সাধারণ সম্পাদকের রাজনৈতিক রিপোর্টে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থতা, দুনীতি, অর্থপাচার, ব্যাংক খাতে লুট ও নৈরাজ্য ও সর্বোপরি খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। রিপোর্টে দুর্নীতি—দুবৃর্ত্তায়ন, লুটপাট, অর্থনৈতিক নৈরাজ্য, সাম্প্রদায়িকতা—মৌলবাদী আক্রমণ ও বাংলাদেশকে ঘিরে সা¤্রাজ্যবাদ, বিশেষ করে মার্কিণ সা¤্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা সম্পর্কে পার্টির নিজস্ব ভিত্তিতে আন্দোলন—সংগ্রাম গড়ে তোলার প্রত্যয়ব্যক্ত করা হয়।
সভায় ভারতে প্রধানমন্ত্রীর সফরে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সম্পর্কে অনুল্লেখ তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ভারতের সহযোগিতার বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়, তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি ছাড়া তিস্তার ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে সহযোগিত কার্য্যত: গাছের গোড়া কেটে ওপরে পানি ঢালার শামিল। সভায় উল্লেখ করা হয় এই পদক্ষেপ তিস্তা সমস্যা সমাধানে আবশ্যক কালক্ষেপন ঘটাবে এবং তিস্তার মানুষকে এই সময়কালে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। সভায় হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলা হয়, তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশ যেন ভূ—রাজনীতির দ্বৈরথের শিকার না হয়। সভায় তাই অবিলম্বে তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান হয়। সভায় আন্তর্জাতিক গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়নে আব্যশিক ভাবে চুক্তিতে উল্লেখিত সংকোশ থেকে খাল কেটে গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়।
ভারতে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফরে ভারতকে বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে রেল করিডোর প্রদান সম্পর্কে বলা হয় ওয়ার্কার্স পার্টি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগের (কানেক্টিভিটি) ওপর গুরুত্ব দেয়। তবে সেটা নিশ্চয়ই একপাক্ষিক নয়। এটাকে বহুপাক্ষিক করা ছাড়া এটা একপেশে ও ভারসাম্যহীন হবে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করবে না।
কেন্দ্রীয় কমিটির দু’দিনের সভায় সভাপতিত্ব করে পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি। আলোচনা অংশ নেন— কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, কমরেড ড. সুশান্ত দাস, কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক, কমরেড নুর আহমদ বকুল, কমরেড কামরূল আহসান, কমরেড আমিনুল ইসলাম গোলাপ, কমরেড মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, কমরেড অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হক্কানী, কমরেড হাজী বশিরুল আলম, কমরেড অধ্যাপক নজরুল হক নীলু, কমরেড আলী আহমেদ এনামুল হক এমরান, কমরেড তপন দত্ত চৌধুরী কমরেড এ্যাড. শেখ হাফিজুর রহমান, কমরেড এ্যাড. নজরুল ইসলাম, কমরেড লিয়াকত আলী লিকু, কমরেড শরীফ শামশির, কমরেড হবিবর রহমান, কমরেড দীপংকর সাহা দিপু, কমরেড এ্যাড. কাজী মাসুদ, কমরেড আবু সাঈদ মিয়া, কমরেড মজিবর রহমান, কমরেড পাভেল ইসলাম, কমরেড আমিরুল হক আমিন, কমরেড এ্যাড. জোবাইদা পারভিন, কমরেড মিজানুর রহমান, কমরেড আবুল হোসাইন, কমরেড মোস্তফা আলমগীর রতন, কমরেড এ্যাড. টিপু সুলতান, কমরেড দেবাশীস প্রমাণিক দেবু, কমরেড মহিবুল্লাহ মোড়ল, কমরেড কিশোর রায়, কমরেড সাদাকাত হোসেন খান বাবুল, কমরেড মফিদুল ইসলাম, কমরেড এ্যাড. লোকমান হোসেন, কমরেড শাহানা ফেরদৌসী লাকী, কমরেড অশোক সরকার, কমরেড তপন কুমার রায়, কমরেড হাফিজ সরকার, কমরেড মুর্শিদা আখতার নাহার, এটিএম নাসির মিয়া প্রমুখ।
সভার শুরুতে শোক প্রস্তাবে পার্টির সাবেক নেতা কমরেড হায়দার আকবর রনো, সাবেক সাংসদ শহীদুল্লাহ শহিদ, নাটোর জেলা সদস্য কমরেড মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা জেলা তালা উপজেলা সদস্য নজরুল ইসলাম, ঢাকা জেলা দোহার উপজেলা সদস্য মুনছের মিয়া, রাজবাড়ী জেলা সভ্য কমরেড বাবু বিশ^াস, টাঙ্গাইল জেলা মির্জাপুর উপজেলা কমরেড সুভাষ সূত্রধর, ভারতের সাবেক কুটনিতিক মুচকন্দ দুবে, জাতীয় পতাকা নকসাকার শিবনারায়ণ দাস, কবি অসিম সাহা, নব্বইয়ের ছাত্রনেতা শফি আহমেদ, কলামিষ্ট ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সহ—সভাপতি মনোয়ারুল হক প্রয়াতদের নাম উল্লেখ করা হয়। প্রয়াতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

Share.