“ভাসানী ও স্বাধীনতা দু’টি সমার্থক শব্দ হলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানমালায় তাঁর বিশেষ কোন প্রকাশ দেখা যায়নি। ১৭ নভেম্বর তার প্রয়াণ দিবসের সংবাদ জাতীয় পত্রিকাগুলোর ভিতরের পাতায় স্থান পায়। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা কেবল প্রভাবকেরই নয় ক্ষেত্রবিশেষে নির্ণায়কেরও। তাকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা হবে মিথ্যা বয়ান।” যেখানে ভারতের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর উৎসবে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি প্রেসিডেন্ট কমিউনিস্টদের সেই ভূমিকার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন তেমনি স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে স্বাধীনতা সংগ্রামে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বদানকারী ভূমিকাকেও স্বীকার করা হবে। সেদিন আমরা থাকব না, কিন্তু নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের ইতিহাসকে সঠিক জায়গায় স্থাপন করবে। ওয়ার্কার্স পার্টির আয়োজিত ‘মওলানা ভাসানী ৪৬ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মরণে ‘ভাসানী ও স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনায় মূলপত্রে একথা বলা হয়।
আজ ১৭ নভেম্বর বিকেল ৩টায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৫০ বছর পুর্তি অনুষ্ঠানের কর্মসূচিতে মওলানা ভাসানীর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মরণে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি জননেতা কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি। পার্টির মিলনায়তনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ঐ আলোচনা সভায় ‘ভাসানী ও স্বাধীনতা’ শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কমরেড কামরূল আহসান।
কমরেড রাশেদ খান মেনন বলেন, যখন কেউ ভাবতেই পারেনি তখন ১৯৪৮-এ পূর্ব পাকিস্তান পরিষদে মওলানা ভাসানী পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের সুনির্দিষ্ট রূপ তুলে ধরেছিলেন। সেটাই অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল যুক্তফ্রন্টের একুশ দফায় আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে সোহরওয়াদী যখন সংখ্যাসাম্য নীতি মেনে নিয়েছিলেন, পূর্ব বাংলার স্বায়ত্ত্বশাসনকে পায়ে দলে ছিলেন, মওলানা পাকিস্তানী ষড়যন্ত্রকারী শাসকগোষ্ঠীকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন না পেলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ জানাতে দ্বিধা করবেন না বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছিলেন। এজন্য তাকে দল ছাড়তে হয়েছিল, তার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সেক্রেটারি মুজিবের সাথে তাঁর বিচ্ছেদ হয়েছিল। আবার সেই মুজিব যখন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের ৬ দফা রূপরেখা তুলে ধরায় ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বন্দী’ তখন তিনিই আটষট্টির ডিসেম্বরে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের অর্গল খুলে দিয়েছিলেন। ষোলই ফেব্রুয়ারি, পল্টনে আয়ুবকে এই মর্মে হুঁশিয়ার করেছিলেন যদি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়া না হয় তা’হলে বাস্তিল দুর্গের মত ক্যান্টনমেন্ট ভেঙে মুজিবকে মুক্ত করে আনবেন। সেনা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়েছিলেন। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়লেও মওলানা ভাসানী স্বাধীনতার স্বপ্নকে ছাড়েন নাই।কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোস্তাক সন্তোষে মওলানা ভাসানীর সাথে সাক্ষাত করতে গেলে মওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধু খুনি বিবেচনা করে খন্দকার মোস্তাকে সাক্ষাত দেননি। মওলানা কৌশলগত কারণে ’৭০-এর নির্বাচন বিরত থাকেন। কারণ তিনি পাকিস্তান বিরোধী শক্তির ঐক্যকে ধরে রাখার প্রয়োজনে এই কৌশল নেন। তিনি ১৯৭১-এর জানুয়ারিতে আওয়াজ তুলেছিলেন, ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার।’
বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ও জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি কমরেড আবুল হোসাইন।
ভাসানী ও স্বাধীনতা দু’টি সমার্থক শব্দ তাঁকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা হবে মিথ্যা বয়ান—ওয়ার্কার্স পার্টি
0
Share.