“বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানীদের মালিকানাধীন কলকারখানাগুলোকে জাতীয়করণ করে জনগণের মালিকানায় দিয়েছিলেন। লক্ষ ছিল উৎপাদনের অংশিদারিত্বে জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রায়ত্ব করণের কারণ এটা ছিলনা যে, শুধু মুনাফা অর্জন। জাতীয়করণকৃত কারকানার উৎপাদিত পণ্যে দ্বারা জনগণের সমৃদ্ধি অর্জনে ব্যয় করা। এজন্য সংবিধানের চার মুলনীতি লিপিবদ্ধ হয়েছিল। সম্প্রতি সরকার ২৫টি পাটকল বন্ধ করে হাজার হাজার শ্রমিককে বেকার করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ব চিনিকল ব্যক্তি মালিকানা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সরকার রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল ও চিনিকল করার বন্ধ করে শুধু শ্রমিকদের বেকার করবে না, এই শিল্পের যোগনদাতা চাষীদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের মুল ধারা ও সংবিধানের মুলনীতি থেকে সরে আসছে যা আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের”
আজ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কিংবদন্তী শ্রমিক নেতা কমরেড আবুল বাশারের ১০ম মৃত্যু বার্ষিকীতে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক জননেতা কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি এ কথা বলেন। স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সভাপতি কামরূল আহসান। সভা সঞ্চালনা করেন ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব এম দেলোয়ার হোসেন।
তিনি আরোও বলেন, ষাটের দশকের শ্রমিক আন্দোলনে যারা জড়িত ছিলেন তারা বাম চেতনার ধারক তারাই ছিলেন মুল ধারা। কমরেড আবুল বাশার সেই ধারা অগ্রপথিক কিন্তু সেদিনের রাজনৈতিক বিভক্তি শ্রমিক আন্দোলনকে বিভক্তি করে তার ক্ষত করেছিল। মানুষকে সংগঠিত করার কাজই একজন কমিউনিস্টের কাজ। কমরেড আবুল বাশার আমাদের সেই উদ্দিপনার নাম। সরকারের নীতির কারণে দেশে দুর্নীতি, লুটপাট ও ব্যক্তিমালিকানার সুনামি চলছে। এর বিরুদ্ধে শ্রমিক আন্দোলনকেই রুখে দাঁড়াতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্ত্যবে পাট-সুতা-বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারি সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও টিইউসি সংগ্রামী সভাপতি শহিদুল্লা চৌধুরী বলেন, পাঁচটি সামরিক শাসন কঠিনতাকে শ্রমিক আন্দোলন ভেঙ্গে দিলেছিল, যার অগ্রভাগে ছিলেন কমরেড আবুল বাশার। দেশে ৭ কোটি শ্রমিকের অস্তিত্ব আজ বিলীন হওয়ার পথে। কথিত গণতান্ত্রিক সরকার গুলো শ্রম আইনকে মালিকদের স্বার্থে নিয়ে গেছে। শ্রমিক রক্তে উপার্জিত সম্পদ ভোগ করে মালিকরা। এটা একটা বৈষম্যমূলক সমাজ। শ্রমিক স্বার্থেই বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন করা দরকার।
জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন বলেন, আমাদের দূর্ভাগ্য যে ফেডারেশনের জন্ম দিয়ে আবুল বাশার শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় ব্রত হয়েছিলেন সেই ফেডারেশন আজ শ্রমিক স্বার্থরক্ষায় খুবই দুর্বল। শুধু ফেডারেশণই নয় সমগ্র শ্রমিক আন্দোলনই শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা করতে পারছে না। শ্রমিক আন্দোলনকে নতুন করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। তাহলেই কমরেড আবুল বাশারের স্মরণ স্বার্থক হবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন, সরকারি কর্মচারি সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব নোমন্জ্জুামান আল আজাদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তফা আলমগীর রতন, বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের নারী বিষয়ক সম্পাদক শাহানা ফেরদৌসী লাকী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরে সাধারণ সম্পাদক কমরেড কিশোর রায়, বিল্ডিং কনষ্ট্রাকশন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, করিম জুট মিল লেবার ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব মুকবুল হোসেন প্রমুখ।