৭২ এর সংবিধানকে মূলভিত্তি করে এদেশে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির পুনর্জীবন ঘটাতে হবে

0

শহীদ ডা. জামিল আকতার রতনের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সুবর্ণজয়ন্তীর বছরব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসাবে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আজ ৩১ মে ২০২২, মঙ্গলবার  সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে “বাংলাদেশে জামাতে ইসলামির উত্থান, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এই মন্তব্য করেন জননেতা কমরেড নুর আহমদ বকুল।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক এবং পার্টির কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরো সদস্য জননেতা কমরেড নুর আহমদ বকুলের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েলের সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান জনাব মিসবাহুর রহমান চৌধুরী, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক জনাব আবু সাঈদ খান, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক নেতা একুশ পদক প্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, ছায়ানটের শিক্ষিকা, বিশিষ্ট নজরুলগীতি শিল্পী ও আরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক জান্নাত-এ-ফেরদৌসি লাকী, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অতুলন দাস আলো প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে নুর আহমদ বকুল বলেন, ছাত্রমৈত্রী নেতা ডা: জামিল আকতার রতন এদেশে ‘রাষ্ট্রধর্ম বিল’ বিরোধী সংগ্রামের প্রথম শহীদ। ১৯৮৮ সালের ৩১ মে, ছাত্র শিবিরের খুনিরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। এদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের পেছনে ‘৭৫ পরবর্তী দু’টি সামরিক শাসক জিয়া এবং এরশাদ সাম্প্রদায়িক শক্তির খুন-গুম-হত্যাকে প্রসারিত করেছিলো। এ যাবতকালে বাংলাদেশে ১৭ বার সংবিধান সংশোধিত হয়েছে। তার মধ্যে ৫ম এবং ৮ম সংশোধনী ছিল সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং প্রতিক্রিয়াশীল সংশোধনী। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্রদর্শনকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সকল অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়। গত দুই দশকে এদেশে মৌলবাদী অর্থনীতি শক্তপোক্ত হয়েছে। একদিকে লুটেরা রাজনীতি এবং অন্যদিকে মৌলবাদী অর্থনীতি মিলে মিশে দেশে দুর্বৃত্তের রাজনীতির প্রতিনিধি করেছে। শহীদ জামিলের জীবনদানকে স্মরণ করতে হলে ‘৭২ এর সংবিধানকে মূলভিত্তি করে এদেশে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির পুনর্জীবন ঘটাতে হবে। বর্তমানে দেশে নানাবিধ মৌলবাদী ষড়যন্ত্র চলছে; ঐ অপশক্তিকে রুখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় ঐক্য গড়তে হবে।”
জনাব মিসবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, “জামায়াতে ইসলাম একটি মোনাফেকের দল। তাদের রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যেই কোরানের অপব্যাখ্যা রয়েছে। মওদুদীবাদের উত্তরাধিকার হিসেবে ফেৎনা সৃষ্টি হত্যা, গুম, খুন তাদের রাজনীতির অন্যতম অঙ্গ। ‘একাত্তরে তারাই আলবদর, আলশামস্ খুনী বাহিনী সৃষ্টি করে গণহত্যা সংঘটিত করেছিলো। বর্তমানে দেশে সংকট সৃষ্টি করে অস্থিতিশীলতা তৈরীতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। এই শক্তিকে যে কোন মূল্যেই প্রতিহত করতে হবে।” এসময় তিনি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকল প্রগতিবাদী প্রকৃত ধর্মপ্রিয় শান্তিকাম্য মানুষের ঐক্য কামনা করেন।
জনাব আবু সায়িদ খান বলেন, “মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি এদেশের জন্য বিপদ- একথা যেমন ঠিক তেমনই গণতান্ত্রিক শক্তির ব্যর্থতা, আপোষকামিতা সে সংকটকে আরো গভীর করেছে। এদেশের বামপন্থীরা দুর্বলতা কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে না।”
মলয়  ভৌমিক বলেন, “জামিল আকতার রতন সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের রাষ্ট্রধর্ম বিলের বিরুদ্ধে প্রথম শহীদ, যিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।”
জান্নাত-এ-ফেরদৌসী লাকী বলেন, “মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে নারী স্বাধীনতাকে যেমন বিকশিত করতে হবে তেমনি সাংস্কৃতিক আন্দোলন বেগবান করতে হবে।”

উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি জননেতা কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি, কমরেড আমিরুল হক আমিন, কমরেড জাকির হোসেন রাজু, কমরেড দীপঙ্কর সাহা দীপু, কমরেড আবুল হোসাইন, কমরেড এ্যাড. ফিরোজ আলম, কমরেড মোস্তফা আলমগীর রতন, কমরেড সাব্বাহ আলী খান কলিন্স, কমরেড কিশোর রায়, কমরেড শাহানা ফেরদৌসী লাকী, কমরেড মুর্শিদা আকতার নাহার, কমরেড বেনজির আহমেদ, কমরেড মুতাসিম বিল্লাহ সানি, কমরেড কাজী মাহমুদুল হক সেনা প্রমুখ। এছাড়াও পার্টির ঢাকা মহানগর ও বিভিন্ন গণসংগঠনের কেন্দ্রীয় ও শাখার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Share.