• ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৭ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডেল্টা প্লান -২১০০ বঙ্গীয় ব-দ্বীপ পরিস্থিতি: পটভূমি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল- অনিল বিশ্বাস ও ইকবাল কবির জাহিদ

0

ডেল্টা প্লান -২১০০
বঙ্গীয় ব-দ্বীপ পরিস্থিতি: পটভূমি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল
অনিল বিশ্বাস
ও ইকবাল কবির জাহিদ

 

সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ ও জনজীবন এক কঠিন পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর এ বিপর্যয়ের প্রথম বহি:প্রকাশ ঘটে বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকের কঠিন লবণাক্ততার মধ্য দিয়ে। যার প্রভাবে ঘটেছিল উপর্যুপরি ফসলহানি। সে সময় হাজার হাজার মানুষ অভাবের তাড়নায় খেতে না পেয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিলেন। প্রতিকারের উপায় হিসাবে সে সময় সরকার বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নদীপাড় ও তৎসংলগড়ব সমতল ভূমি অর্থাৎ ফসলের মাঠের চারিধারে বাঁধ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। এলাকাকে তখন কতকগুলি পোল্ডারে  বিভক্ত করা হয়েছিল যার নাম কর্ডন পদ্ধতি । এতে সাময়িকভাবে নোনা পানির হানা থেকে ফসল বাঁচানো গেলেও দ্বিতীয় বার দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। আসলে এই জলাবদ্ধতা পোল্ডার ব্যবস্থারই ফল। বিল ডাকাতিয়া, ভবদহ এলাকা এবং কপোতাক্ষ অববাহিকার বিস্তীর্ণ জনপদ বছরের পর বছর বদ্ধ পানির নিচে তলিয়ে থেকেছে। এ থেকে মুক্তি পেতে যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় জোরালো গণ আন্দোলন সংগঠিত হয়ে চলেছে। এসব ঘটনার সাথে যুক্ত থেকে আমরা জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার কারণ অনুসন্ধান করেছি। এই কাজের মধ্য দিয়েই আমাদের এই ধারণা হয়েছে, নদনদীর স্বাভাবিক প্রবাহে হস্তক্ষেপ করা হলে তা লাভের চেয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্তা ও জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী এখানকার নদী ও পানির স্বাভাবিক প্রবাহের ওপর হস্তক্ষেপ। মূলতঃ ব্রিটিশ শাসনামলেই এ অঞ্চলের নদী ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপের সূত্রপাত হয়েছিল। পরবর্তীকালে পাকিস্তান আমলে বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে নীতিগত ভাবে নদী প্রবাহকে কঠোর নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেই একই নীতি আঁকড়ে ধরে নদীসমূহকে কঠোর নিয়ন্ত্রণের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আসলে বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসাবে বন্যা প্রতিরোধের পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। এটা ভালোর চেয়ে দেশের জন্য উত্তরোত্তর ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। সে কারণে চলমান এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিজ্ঞতায় আলোকে বন্যা প্রতিরোধের নীতিকে আমরা বাস্তবতা বিবর্জিত দারুন একটা ভুল বলে বিবেচনা করছি। তাই অতীতের ভুলের মাসুল না বাড়িয়ে স্বাভাবিক বন্যাকে মেনে নেওয়া দেশের জন্য বরং মঙ্গল। এ পুস্তকে আমরা সে কথাটি বলার চেষ্টা করেছি।
বিগত শতকের ষাটের দশকে কর্ডন পদ্ধতি বাস্তবায়ন কালে পূর্বসৃষ্ট নদী সমস্যার সংশোধন করা হয়নি। প্রকৃতির নিয়ম না মেনে তার বিকৃতি ঘটানো প্রকৃতি মেনে নেয় না। কর্ডন বাস্তবায়ন কালে প্রকৃতির নিয়ম মানা হয়নি। যে দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে অতীতে কর্ডন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, ডেল্টা প্লান ২১০০ প্রণয়নে সে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায় নি। ‘বঙ্গীয় বদ্বীপ পরিস্থিতি: পটভূমি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল’ লেখাটি ডেল্টা প্লান ২১০০-কে কেন্দ্র করে। এখানে চূড়ান্ত ভাবে আমাদের অভিজ্ঞতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের সেই অভিজ্ঞতা কতখানি বস্তুনিষ্ঠ ছিল তা যাচাই করার প্রয়োজনে বিশিষ্ট গবেষকদের মতামত ও নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।

বইয়ের ডাউনলোড লিংক: deltaplan2100_d_final -USE THIS ONE

Share.