• ১৭ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মরণে সভায় সকল রাজনৈতিক মত ও পথ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ গড়ে তুলুন—রাশেদ খান মেনন

0

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সকল সকলরাজনৈতিক মত ও পথ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ মঞ্চে সমাবেত হতে আহবান জানিয়ে বলেছেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আহবানে এভাবেই সবাই সমাবেত হয়েছিলেন ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনে গণজাগরণ মঞ্চে। মেনন এ ব্যাপারে তরুণদের বিশেষ করে সংগঠিত হতে বলেন, তারাই হবে এই লড়াইয়ের “ফুট রেঞ্জার” বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৫০ বছর পুর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপি কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আজ ১৬ জুলাই ২০২২ শনিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্মরণে “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি” শীর্ষক এক আলোচনা সভার অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, আদিবাসি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। আলোচনা সভায় মূলপত্র উত্থাপন করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সংগ্রামী সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি। সভায় প্রধান অতিথি বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাহাত্তরের সংবিধানে চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ যুক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে একটি দেশে একটি শুভ পরিণতির দিকে ধাবিত হয়েছিল। ১৫ আগস্টের হৃদয় বিদারক ঘটনা জাতির প্রেক্ষাপট বদলে দেয় স্বাধীনতা বিরোধী সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদ সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম সংযোজন করে দেশকে পশ্চাদপদতার দিকে নিয়ে যাওয়ায়, আজ অবস্থা ভয়াবহ। দেশের জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এর খেসারত দিতে হচ্ছে। শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ তারই লক্ষণ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মানবিকতার শক্র, জাতীয়তার শক্র, গণতন্ত্রের শক্র ও সমাজতন্ত্রের শক্র। উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির নব উত্থানকে তাই সম্মিলিত ভাবে মোকাবেলা করতে হবে। বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, হেফাজতের সাথে আপোষ করা আত্মহত্যার শামিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গোলাম আযমসহ স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আংশিক হলেও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচার অদৃশ্য কারণে আটকে আছে। এই বিচার না হলে সাম্প্রদায়িক শক্তি আস্কারা পেতে পেতে দেশ কে আফগানিস্তানের মত ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে যাবে। তিনি ১৪ দলকে আহ্বান জানান সাম্প্রদায়িক শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের মোকাবেলায় গণজাগরণ ও গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য।

আলোচনা সভায় মূলপত্র উত্থাপন করেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, তিনি আরও বলেন, বস্তুত দ্বিজাতিতত্ত্বের খাঁচা থেকে বেরিয়ে এসে একটি অসাম্প্রদায়িক ও ভাষা-সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ছিলো মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের প্রধান ভিত্তি। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সাম্য যে ভিত্তিকে দাঁড় করায় একটি ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্রব্যবস্থার চালিকাশক্তি হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধ সেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার সংকল্পের দিকে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে কারণেই চার মূলনীতি সংবিধানে যুক্ত করেছিলেন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব বক্তব্যই আমাদের উপলব্ধির জন্য সম্যক যথার্থ। বঙ্গবন্ধু সংসদে ধর্মনিরপেক্ষতার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলেছিলেন, “ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্ম-কর্ম করার অধিকার থাকবে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মপালন করবে। তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের আপত্তি হলো শুধু এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। আলোচক সঞ্জীব দ্রং বলেন, সারাবিশে^ ৪৮ কোটি নৃতাত্বিক ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। জাতিসংঘ ১৯৯২ সালে মানবাধিকার সনদে নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী সহ আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণের কথা বলেছেন। আমাদের সংবিধানেও সকল মানুষের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। সংবিধানের সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে, আমরাও আদিবাসী পরিচয় আর দিব না। তিনি বলেন, দেশে এখন আদিবাসীদের ওপর শোষণমূলক ও সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন
চলছে। যার জন্য আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যা করতে হয়। সভায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সংগ্রামী
সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপট এখনো বহাল আছে। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ১৪ দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। মৌলবাদী শক্তিকে বিশ^াস করলে পস্তাতে হবে। দেশে এখন মৌলবাদীদের নবউত্থান হয়েছে। রাস্তায় বের হলে মনে হয়, বাংলাদেশে নয় আফগানিস্তানের পথ দিয়ে হাঁটছি। দেশে এখন রিজিয়ুম চেঞ্জের খেলা চলছে। সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি আমেরিকা সহ আরও অন্য শক্তি দেশে একটি তাঁদের পছন্দের একটি দলকে ক্ষমতায় আনতে চায়। সভায় পরিচালনা করেন, পলিটব্যুরো সদস্য নুর আহমদ বকুল। সভায় পরিচালনা করেন, পলিটব্যুরো সদস্য নুর আহমদ বকুল। সভায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নাট্যকার অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর বাসায় সাম্প্রদায়িক হামলাসহ সাম্প্রতিক নড়াইলে হিন্দুদের বাড়ি, মন্দির, দোকানপাটে যে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে তার নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়।

Share.